মঙ্গলবার, ২ আগস্ট, ২০১১

‘১৯৯৪-২০১০: সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫০হাজারেরও বেশি মানুষ’

‘১৯৯৪-২০১০: সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫০হাজারেরও বেশি মানুষ’



ঢাকা: সারাদেশে ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী ও লাইসেন্সবিহীন চালক রয়েছে প্রায় ৫ লাখ ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি রয়েছে ৮৬ হাজার। আর লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালকদের মধ্যেও রয়েছে অনেক অদক্ষ ও অপ্রশিক্ষিত চালক। ফলে দেশে প্রতিদিনই ঘটছে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা।

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পাশাপাশি অনেকে পঙ্গু হয়ে স্বাভাবিক জীবন থেকে ঝরে পড়েছে।

বিআরটিএ হিসেবে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ নিবন্ধিত যানবাহনের বিপরীতে বৈধ লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালকের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ।

আর বাকি সাড়ে ৫ লাখ গাড়ি চালাচ্ছে ভুয়া লাইসেন্সধারী চালকেরা। বেসরকারি পরিসংখ্যানে ঢাকাসহ সারাদেশে ৬১ ভাগ চালক বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালাচ্ছেন।

দেশে ১৯৯৪ থেকে ২০১০ সাল এই ১৭ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার জন। এর মধ্যে মারা যায় ৫০ হাজার ৫শ ৪৪ জন ।

পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১০ সালে ২ হাজার ৮শ ২৭টি সড়ক দুর্ঘটনা মোট হতাহত হয়েছে ৪ হাজার ৪শ ৪৯ জন।

অন্যদিকে সেন্টার ফর মিডিয়া রিসার্চের(এমআরটি) বার্ষিক প্রতিবেদনে ২০১০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বলা হয়েছে ৪হাজার ৪৮১জন। যা গড়ে প্রতিদিন ১২ জনেরও বেশি। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৫হাজার ৫৬৯ জন অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৪২ জনেরও বেশি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সি্েডন্ট রিচার্স ইনস্টিটিউট (এআরআই) এর পরিচালক ড. হাসিব মোহাম্মদ আহসান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রশিক্ষিত চালকের বিকল্প নেই। সড়ক দুর্ঘটনা দিনে দিনে যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে চালকদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

তিনি বলেন, এর জন্য দরকার হলে সরকারকে বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে চালকদের প্রশিক্ষিত করে তুলবে। তিনি সরকারের ফর্মাল ট্রেনিং সেন্টার বাড়ানোর কথাও বলেন।

এজন্য সরকারকে পাঁচ বছরের একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সরকার যদি কোন পরিকল্পনা হাতে না নেয় তাহলে এই অবস্থার কোন উন্নতি করা যাবে না। আর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রানহানির ঘটনা এখন এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে কোন মহামারি বলব না রোগে যেভাবে মানুষ মারা যায়, ঠিক তেমনই একটা মানব সৃষ্ঠ কারণ।

সরকারের নীতিনির্ধারকেরাই পারে সড়ক দুর্ঘটনায় এই ধরনের অবস্থার পরিবর্তন আনতে। সরকার শুধু কিছু রাস্তার উন্নয়ন করল, মাঝে মাঝে আইনের প্রয়োগ করে কিছু চালককে শাস্তি দিলেই হবেনা। এজন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা।

এ সম্পর্কে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান মো. আইয়ুবুর রহমান বলেন, চালকদের প্রশিক্ষণের জন্য আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশিক্ষণ সেন্টার করেছি। এছাড়া যে সকল শহরে প্রশিক্ষণ সেন্টার নেই সেখানে ভ্রাম্যমাণ টিম গিয়ে চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে।

তিনি বলেন, গত বছর ১৩ হাজার চালককে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এবছর আমরা ১৪ থেকে ১৫ হাজার চালককে প্রশিক্ষণ দিতে পারব।

এছাড়া তিনি পাঁচ লাখ লাইসেন্সবিহীন চালকদের মধ্যে প্রায় চার লাখই মোটরসাইকেল চালক রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

আর ফিটনেস বিহীন গাড়ি ধরতে বিআরটিএ মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালাচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে এই অভিযান বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।

হাইওয়ে পুলিশের (পূর্ব) কুমিল্লা জোনের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী ও লাইসেন্সবিহীন চালকদেরকে আইনের আওতায় আনতে ফিটনেসবিহীন গাড়িকে ধরতে আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছি।

প্রতি মাসে ৭০০-৮০০টি মামলা দেওয়া হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, এর মধ্যে অধিকাংশই ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী ও লাইসেন্সবিহীন চালক।

সারাদেশে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের পরিচালনায় ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৮টি। এগুলোর মাত্র দুটি রয়েছে রাজধানীতে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রেও বিআরটিএর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিআরটিএ মাসে সাড়ে ৩ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে পারে। যেখানে চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার। ফলে লাইসেন্স পেতেও অপেক্ষা করতে হয় তিন থেকে ছয় মাস এমনকি এক বছরও।

পুলিশ হেডকোয়ার্টারের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন(এফআইআর) অনুসারে দেশে ওই ১৭ বছরে ৭০ হাজার ৫শ ৭টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনাগুলোতে ১ লাখ ৩ হাজার ৬শ ৪ জন মানুষ হতাহত হয় ও মারা যায় ৫০ হাজার ৫শ ৪৪ জন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১০ সালে ২ হাজার ৮শ ২৭টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। আর মোট হতাহত হয়েছে ৪ হাজার ৪শ ৪৯ জন।

এর মধ্যে মারা গেছে ২ হাজার ৬শ ৪৬ জন, গুরুতর আহত বা পঙ্গু হয়েছে ১ হাজার ৩শ ৮৯ জন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন