সোমবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদ

                 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারন শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ ক্যাডারদের নির্যাতনের ঘটনা এখন প্রতিনিয়ত ঘটছে। তবে নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য এবছর থেকে ছাত্রলীগ এক অভিনব পন্থা উদ্ভাবন করেছে। এখন থেকে হলে উঠতে হলে সবাইকে ছাত্রলীগের নেতাদের সামনে ভাইভা তথা সাক্ষাৎকারের সম্মুখীন হতে হবে। আর ভাইভাতে পারফোমেন্স খারাপ করলে তাকে হল থেকে বিতাড়িত করা হবে। শত চেষ্টা করেও সে শিক্ষার্থী আর হলে থাকতে পারবেনা। সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধুর জীবনী, তার নানা-নানী, দাদা-দাদী, মামা-মামী, শেখ হাসিনার জীবনি নিয়ে তারা নবীন শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে। এ প্রশ্নের উত্তর দিতে যে সক্ষম তাকে হলে থাকার অনুমতি দিচ্ছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ ক্যাডারদের এ রকম বিব্রতকর সাক্ষাৎকার নিয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থী এখন চরম বিপাকে। অন্যদিক হলে উঠার জন্য শেখ মুজিব ও তার গোষ্ঠীর জীবনি পড়তে বাধ্য হচ্ছে সাধারন শিক্ষার্থীরা।
অনেকে আবার কিছকিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেও মাদরাসা থেকে আসার কারনে হলে থাকার অনুমতি পাচ্ছেনা। নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, মাদরাসা থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদেরকে নানা ভাবে হয়রানি ও অপদস্থ করছে ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ভাইভাতে বিশ্ববিদ্যালয় কতিপয় শিক্ষক মাদরাসা শিক্ষার্থীদেরকে যেরকম অবজ্ঞা করেছিন। তেমনি ভাবে হলে উঠার জন্য ভাইভা দিতে এসে নানা রকম নির্যাতন আর অপমানের শিকার হতে হচ্ছে বলে অনেক নবীন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায় মুখে দাড়ি আর গায়ে পাঞ্ছাবী পড়া থাকলে ছাত্রলীগ ক্যাডারা গায়ে হাত দিতে দ্বিধাবোধ করেনা। ছাত্রলীগ দাড়ি আর টুপি দেখলে তাদের চোখের সামনে থেকে সরে যাওয়ার জন্য বলে। এদিকে সলিমুল¬াহ মুসলিম হলে গতবছরের মতো এবার ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য হল নিষিদ্ধ ঘোষণা করছে। ছাত্রলীগের হাতে পায়ে ধরে গতবছর কিছু শিক্ষার্থী হলে উঠতে পারলেও এবছর সে পথ একেবারেই বন্ধ বলে জানা গেছে। তবে হলের মধ্যে যারা সক্রিয় রাজনীতি করছে তারা কয়েকজনকে তুলতে পারবেন বলে অনেক নেতাই আশা করছেন। এছাড়াও ঢাবির প্রায় প্রতিটি হলে মাদরাসা শিক্ষার্থীদেরকে হলে উঠাতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছে ছাত্রলীগ। মাদরাসার কোন শিক্ষার্থী হলে থাকার জন্য ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে সাক্ষাৎকরলে নেতারা তাদেরকে মার খাওয়া থেকে বাঁচতে হলে হলের থাকা তো দুরের কথা হলের নাম মুখে না এনে যেদিক থেকে এসেছো সেদিকেই চলে যাও বলে তাদেরকে বলে দেয়।
ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাতে নির্যাতনের শিকার একধিক শিক্ষার্থী জানায়, হলে থাকতে হলে ছাত্রলীগ নানা রকম প্রতিশ্র“তি নিচ্ছে। পরীক্ষা মিস হলেও প্রোগ্রাম মিস দেয়া যাবে না। হল নেত্রীবৃন্দ যা বলেন তাই করতে হবে। কাউকে মারতে বলনে যেভাবেই হোক তাকে মারতে হবে। এরকম শর্ত মানতে পারলে হলে থাকা সম্ভব। অন্যথায় হলে থাকার চিন্তা মাথা থেকে বাদ দেয়ার কথা বলে দিয়েছে ছাত্রলীগ।
দুঃখ প্রকাশ করে অন্য এক শিক্ষার্থী জানায়, মাদরাসায় পড়ার কারনে মেধাক্রম প্রথমে থেকেও পচন্দ অনুযায়ী সাবজেক্ট পাইনাই। এখন আবার হলেও থাকতে পারবোনা। বিষয়টি মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। কার কাছে এর বিচার পাবো?  অবস্থা দেখে মনে হয় ছাত্রলীগ যেন পুরো প্রশাসন চালাচ্ছে।
এদিকে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের কর্মকান্ডে প্রতিনিয়ত নিরব প্রশাসন। কেননা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে প্রশাসন যখন কোন ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা করে। তখনি নতুন কোন ইস্যু তৈরী করে ছাত্রলীগ প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে হলের মধ্যে সাধারন শিক্ষার্থীদেরকে দিয়ে হলে বিক্ষোভ করায়। ছাত্রলীগের চাপের মুখে বিষয়টি পরবর্তীতে ধামা চাপা দেয়া হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ছাত্রলীগ হল তুলতে গিয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের প্রতি মারমুখি ভূমিকায় যাচ্ছে। তাদের কাছ থেকে নানা রকম প্রতিশ্র“তি দিয়ে হলে তুলছে। তাদের মনোপুত না হলে হল থেকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিচ্ছে। যদি ও হলে শিক্ষার্থী উঠানোর কাজ হল প্রশাসনের করার কথা ছিল প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে এ কাজটি এখন ছাত্রলীগ করছে। ঢাবি প্রশাসন এখন ছাত্রলীগের হাতে অসহায়। হলে কে থাকতে পারবে নাকি থাকতে পারবেনা এ সিদ্ধান্ত নেয়া এখন ছাত্রলীগের হাতে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে আবাসন সংকট এর কারনে ছাত্ররা হলের মধ্যে মানবেতর জীবন যাপন করছে। সেখানে ছাত্রলীগ অনেক নেতারা বহিরাগত অনেকেই হলে আশ্রয় দিচ্ছেন। এমনকি চার জনের রুমে অনেক নেতা একাই থাকছেন।
এ ব্যাপারে এফ রহমান হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান বলেন, হল প্রশাসনের কাজ কি ? নিয়ম নীতি নৈতিকতার চর্চা না করলে কোনভাবেই এর পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, দায়িত্ব পালন করতে না পারলে হল প্রশাসনের কোন দরকার নেই। হল গুলোকে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদেরকে ভাগ করে দিলেই হয়।
মুজিব হলের প্রভোস্ট ড.বায়তুল¬াহ কাদেরী বলেন, ছাত্র সংগঠন এবং হল প্রশাসন উভয় মিলেই হলের হলে নতুন শিক্ষার্থী তুলতে হবে।
ঢাবি জিয়া হলে ওয়াইফাই চালু
ছাত্ররা পাচ্ছে ফ্রি ইন্টারনেট সেবা
লিংকন মাহমুদ,ঢাবি প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জিয়াউর রহমান হলে ছাত্রদের জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি ওয়াইফাই ইন্টারনেট চালু করা হয়েছে। বর্তমান সরকার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল হলগুলোর মধ্যে একমাত্র জিয়া হল প্রথমে এগিয়ে এসেছে। হল কর্তৃপক্ষের একক চেষ্টায় এ উদ্যোগ সফল হয় বলে জানা যায়। জিয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: সাইফুর রহমান সোহাগ বাংলাবাজার পত্রিকাকে জানান বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে এ উদ্যোগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সকল ছাত্রদের মনে আশা জাগিয়েছে। সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নমূলক কাজের মধ্যে হলগুলোতে ফ্রি ওয়াইফাই চালুকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। তিনি জানান বর্তমানে আমাদের হলে সকল ছাত্র ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পেরে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। টাকা খরচ করতে হচ্ছে না। আমাদের হলের সাথে সাথে পার্শবর্তী হলের ছাত্ররাও এ সুবিধা পেতে এখানে ছুটে আসছে। আপাতত হলের নিচতলা, দ্বিতীয় তলার সম্পূর্ণ অংশে এ ওয়াইফাই ব্যবহার করা যাচ্ছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ হলে এ সুবিধা পাওয়া যাবে বলেও তিনি জানান। জানা যায়, গত মাসের ৯ তারিখে এক বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। জিয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: সাইফুর রহমান সোহাগ এর পরিচালনায় হল প্রভোস্ট আ ব ম ফারুক এর সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রধান অতিথি হিসেবেএ ওয়াইফাই উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনকালে উপাচার্য বলেন, অতি দ্রুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যলিয়ের প্রত্যেক হলকে ছাত্রদের জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি ওয়াইফাই ইন্টারনেট সেবার আওতায় নিয়ে আসা হবে। এর মাধ্যমে ছাত্ররা আরো বেশী প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের মেধাকে শানিত করতে পারবে। ছাত্রদের পড়ালেখা ও গবেষণা আরো সহজতর হবে। তিনি জিয়া হল কর্তৃপক্ষকে এ সেবা দানের লক্ষে এগিয়ে আসার জন্য স্বাগত জানান। হল প্রভোস্ট জানান, বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়কে সামনে রেখে হলে এ ওয়াইফাই ইন্টারনেট চালু করা হয়েছে।    


নকশা পরিবর্তন, দৈর্ঘ্য ও ভূমির মূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অঙ্গের কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রস্তাবিত পদ্মা বহুমুখী সেতুর ব্যয় প্রায় ১০ হাজার ৩৪৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বেড়েছে। ফলে সংশোধিত ডিপিপিতে পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরকালে পদ্মা সেতু নির্মাণে জাপান সরকারের প্রতিশ্রুত আরো ৬৮৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) বৈঠকে সংশোধিত ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে ৬৮৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয় কমে এ প্রকল্পে সরকারি খাতের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৫৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আর বৈদেশিক সাহায্য বেড়ে ১৬ হাজার ২৪৯ কোটি ৫২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
ঢাকা-মাওয়া-খুলনা মহাসড়কের মাওয়া-জাজিরায় পদ্মা নদীর ওপর এ সেতু নির্মাণ করা হবে। ২০১৫ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন নকশায় পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। প্রকল্প বাস্তবায়নে ১ হাজার ১২৫ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হবে এবং ১৪ কিলোমিটার নদী শাসন করা হবে। এর সঙ্গে এ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হবে ১২ কিলোমিটার।


ঢাবিতে ইন্টারনেট সমস্যা,হলগুলোতে চালু হচ্ছে ওয়াইফাই
লিংকন মাহমুদ,ঢাবি প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল সম্পূর্ণ প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসা বছরের শেষ দিনটিতেও স্বপ্নই রয়ে গেছে। ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র দুটি সাইবার সেন্টার । যার বেশীরভাগই নষ্ট হয়ে আছে। অন্যদিকে এই সাইবার ক্যাফ গুলোতেও রয়েছে নানাবিধ সমস্যা। নেটওয়ার্কের ধীর গতি,কম্পিউটার পেতেও অপেক্ষা করতে হয়  দীর্ঘ সময়। ছাত্রশিক্ষক কেন্দ্র (টি এ সি) ও এ মাসের ৯ তারিখে জিয়াউর রহমান হলে চালু হয়েছে ওয়াইফাই ইন্টারনেট সংযোগ। যাদের কম্পিউটার আছে তারাই শুধু এ সেবা পাচ্ছে। অন্যদের জন্য কিছু করা হচ্ছে না। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন আনুযায়ী প্রতিটি বিভাগের নিজস্ব কম্পিউটার ল্যাব থাকার কথা থাকলেও এ আইনের বাস্তবায়ন নেই। কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও সুদৃষ্টির আভাবেই এ সমস্যার  সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিজ্ঞমহলের ধারণা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) মোট ৩৫ টি কম্পিউটার আছে । এর মধ্যে ১৭ টি কম্পিউটারই অকার্যকর । এর কোনগুলোতেই বাংলা লেখা যায়না। কর্তৃপক্ষ এক বছর আগে অচল কম্পিউটারগুলো ঠিক করার কথা বললেও এখন পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সাইবার সেন্টারে ২৩ টি কম্পিউটার আছে । এর মধ্যে ২ টি কম্পিউটার অকার্যকর । কস্পিউটারের সংখ্যা অল্প হওয়ায় লাইনে দাড়িয়ে প্রয়োজন পূরন করতে ব্যার্থ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা । অভিযোগ রয়েছে এখানে বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং হওয়ায় প্রায়ই তা বন্ধ থাকছে। বাধ্য হয়ে ভুক্তভোগিরা নীলক্ষেতসহ আশপাশের দিকে ছুটে যাচ্ছে। এর মধ্যে ইসালামিক স্টাডিস ও ইতিহাস বিভাগে সমৃদ্ধ ল্যাব থাকলেও কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারনে তা অচল হয়ে আছে। বাণিজ্য অনুষদ গুলোতে ল্যাব থাকলেও তার গতি অত্যান্ত স্লো। ফলে কোন কিছু ডাউনলোড করতে গেলে প্রচুর সময় নষ্ট হয় । শিক্ষার্থীরা দ্রুতগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ চালুর দাবি জানায় । হলগুলোতে সমস্যা: মাত্র একটি হলে ওয়াইফাই চালু হলেও অন্য ১৬ টি হলে তার দেখা নাই। এ ব্যাপারে টি এস সি পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, সাইবার সেন্টরের কিছু সমস্যা রয়েছে। সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে। খুব শিগগিরই ব্যাপারটি সমাধান করা হবে বলে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, টি এস সি সহ সকল সাইবার সেন্টারের উন্নয়ন করা হবে। পুরো ক্যাম্পাসে ওয়াইফাই ইন্টানেট চালু হবে । সেই সাথে হলগুলোতেও নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।           
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার
এখনো মান্ধাতার আমলের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রিয় গ্রন্থাগারের বাইরে লেখা রয়েছে- নিরবতা পালন করুন। উচ্চস্বরে কথা বলবেন না। তবে দেয়ালে এ নির্দেশনা লেখা থাকলেও অনেকেই তা মানেন না। এ কারণে হইচই আর কোলাহলে গ্রন্থাগারের মনোযোগী পাঠকরা পড়ছেন অসুবিধায়।
এছাড়া পাঠাগারের আসবাবপত্রের অবস্থাও নাজুক। অনেক চেয়ার ভাঙা। ভালোগুলোতে বাসা বেঁধেছে ছারপোকা। বসার জায়গা না পেয়ে আবার ফিরে যাচ্ছেন অনেকে। পাঠাগারে নতুন সংস্করণের বই পাওয়া দুষ্কর, কক্ষের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও অকেজো দীর্ঘদিন।
এমন নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। শুধু তাই নয়, ডিজিটালাইজড করার পরিকল্পনা থাকলেও এখনো তার কোনো ছোঁয়া লাগেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ মেজবাহ উল ইসলাম বলেন, আধুনিক গ্রন্থাগার বলতে যা বোঝান হয় তার পুরোটা এখানে নেই। আধুনিক গ্রন্থাগারে প্রতি মাসেই পুরনো বই ছাঁটাইকরণ প্রক্রিয়া হয়ে থাকে। কিন্তু এখানে বছরেও একবার বই ছাঁটাই করা হয় না। জানা গেছে, ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে গত ৬ বছরে নতুন কোনো বই কেনা হয়নি। অবশ্য বর্তমানে একে ডিজিটালাইজড করার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩-৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে।১৯২১ সালের ১ জুলাই তৎকালীন ঢাকা কলেজের গ্রন্থাগার থেকে পাওয়া ১৭ হাজার বই নিয়ে এ গ্রন্থাগারের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এখানে প্রায় ছয় লাখের অধিক বই ও সাময়িকী থাকার কথা জানালেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু যুগোপযোগী বই না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর চাহিদা মিটছে না বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।কম্পিউটারের মাধ্যমে বই, কল নম্বর সংগ্রহ করার ব্যবস্থা থাকলেও কল নম্বর অনুযায়ী বই খুব কমই পাওয়া যায়। দক্ষিণ পাশে ২৮টি কম্পিউটার নিয়ে একটি সাইবার সেন্টার রয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য পাঁচ ঘণ্টার বিনিময়ে ৬০ টাকা করে নেওয়া হয়। কিন্তু আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও ফিরে যেতে বাধ্য হন। তিন তলাবিশিষ্ট গ্রন্থাগারের প্রতিটি তলায় দু'জন করে কর্মকর্তা নিয়োজিত রয়েছেন। তাঁদের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারেও শিক্ষার্থীদের রয়েছে অভিযোগ। টয়লেটগুলো নোংরা পরিবেশ আর দুর্গন্ধের জন্য পাঠকদের ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।২০১০-১১ শিক্ষা বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে এক কোটি ৬৯ লাখ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পুস্তক ও সাময়িকী ক্রয়ে এক কোটি ১২ লাখ টাকা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে বিপুল অর্থ বরাদ্দ রাখা হলেও তেমন কোনো উন্নতি নেই । নেই কোনো আধুনিকায়নের ছোঁয়া। বিদ্যুৎ গেলে ছাত্রছাত্রীদের মারাত্মক বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। গ্রন্থাগারিক অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন মুন্সী বলেন, বেশি সমস্যা হলো আধুনিকায়নের সমস্যা। ডিজিটাল লাইব্রেরি বলতে যা বোঝায় তার সম্পূর্ণটাই এখানে অনুপস্থিত। লাইব্রেরি থেকে বই চুরির ব্যাপারে তিনি বলেন, পাঠকরা সচেতন না হলে এ সমস্যা কাটবে না।তবে গ্রন্থাগারকে ডিজিটালাইজ করা গেলে এ কাজে জড়িতদের হাতেনাতে ধরা যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বই না পাওয়ার বিষয়ে বলেন, বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় বইয়ের তালিকা না দেওয়ায় এবং বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের ইস্যু করে বই দেওয়ার ফলে সাময়িকভাবে বিঘœ ঘটছে। তবে কেউ কর্তৃপক্ষকে জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত গ্রন্থাগার গড়ার লক্ষ্যে ডিজিটালইজ করার প্রক্রিয়া চলছে। এর মাধ্যমে বিদ্যমান সংকট দূর করা সম্ভব হবে। বই চুরি রোধসহ শিক্ষার্থীদের সব ভোগান্তি কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।


ফিরে দেখা ২০১০: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তুমুল সমালোচিত ছাত্রলীগ
নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে খ্রিস্টীয় ২০১০ সালটি পার করেছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সারা দেশের মত ঢাবি ক্যাম্পাসেও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে বছর জুড়ে ব্যাপক সমালোচিত ছিল ছাত্রলীগ। ছলে-বলে প্রতিপক্ষের উপর নগ্ন হামলা চালিয়ে নিন্দা কুড়িয়েছে সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। এমনকি তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রাণ হারাতে হয়েছে মেধাবী ছাত্র আবু বকরকে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দেশের প্রতিটি মানুষকে ব্যাথিত করেছে। ঘটেছে প্রথমবারের মত ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা। ক্যাম্পাসে সড়ক দুর্ঘটনা আর এর জের ধরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকটি।
আবার গর্ব করার মতো ঘটনাও রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বহিষ্কারাদেশ ৬১ বছর পর এ বছরই প্রত্যাহার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথমবারের মত চালু হয় অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম। ত্র“টি থাকলেও এ পদ্ধতিকে ডিজিটাল যুগে প্রবেশের প্রথম ধাপ হিসেবে সাদরে গ্রহণ করে নেন সকলে। ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া এ রকমের আলোচিত-সমালোচিত ঘটনাগুলো নিয়ে ফোকাস বাংলা নিউজের বছর শেষের এই আয়োজন।
পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাদের নিয়ে ছাত্রলীগের হামলা
১৮ জানুয়ারি পদবঞ্চিত ছাত্রদল কর্মীদের পক্ষ নিয়ে ছাত্রলীগ ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু সমর্থক কর্মীদের উপর দফায় দফায় হামলা চালায়। ছাত্রলীগ কর্মীদের সশস্ত্র হামলায় ছাত্রদল সভাপতি গুরুতর আহত হন। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম খান ও শাহবাগ থানার ওসি রেজাউল করিমসহ আরও অনেকে আহত হন। এ হামলায় ছাত্রলীগ কর্মীরা প্রকাশ্যে পিস্তল, কিরিচ, রামদা, হকিস্টিক, বোমা, ককটেল ও দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করে। ছাত্রদলের নতুন কমিটির নেতারা ভিসির সঙ্গে দেখা করার জন্য পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী ক্যাম্পাসে গেলে ছাত্রলীগ কর্মীরা টুকুর ওপর এ হামলা চালায়। হামলা তীব্রতর হলে টুকুসহ ছাত্রদল নেতাদের বাঁচাতে লাঠিচার্জ ও কমপক্ষে ২০টি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।
এ ঘটনায় ছাত্রলীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করলেও বিভিন্ন টেলিভিশনের ভিডিও ফুটেজ ও পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিতে এর সত্যতা মেলেনি। হামলাকারীর অনেকের পরিচয় ছিল ক্যাম্পাসে সবার মুখে মুখে। তাদের অনেককে ১৯ জানুয়ারিতে ছাত্রলীগের মিছিল-সমাবেশে দেখা গেছে। সশস্ত্র হামলাকারীদের গ্রেফতার এবং ভিসির পদত্যাগের দাবিতে ২০ ও ২১ জানুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্র ধর্মঘট ডাকে ছাত্রদল।
ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৯ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার কোনো ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল এ বছরের প্রথম মাসে। ২১ জানুয়ারি গভীর রাতে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে অনার্স প্রথমবর্ষ ভর্তি পরীক্ষার তিনটি সেটের সবগুলোই ফাঁস করে। ওই রাতেই কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।
পরে নতুন প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে ৫ ফেব্র“য়ারি এ পরীক্ষা নেয়া হয়। সিন্ডিকেটের সঙ্গে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ের নেতারা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় পুলিশ মূল হোতাদের আটক করতে না পারলেও তাদের সহযোগী ছাত্রলীগ কর্মী টিটু (রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ) ও সুমন ওরফে নলা সুমন (ম্যানেজমেন্ট ৪র্থ বষ)-কে আটক করে। এরা দু’জনই পেশাদার প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী। এদের বিরুদ্ধে মেডিকেল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, পিএসসি ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রশ্ন ফাঁস ও ভুয়া ফরম জালিয়াতি, সিরিয়াল মিলিয়ে ফরম বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।
ছাত্রলীগের কোন্দলের বলি মেধাবী প্রাণ
২ ফেব্র“য়ারি মধ্যরাতে সিট দখলকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এএফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দু’গ্র“পের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় মারা যান ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয়বর্ষের ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক। সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বলি হতে হয় এই নিরীহ মেধাবী ছাত্রকে। সংঘর্ষের সময় মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে দু’দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের আইসিইউতে মারা যান। আবু বকরের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুরে। মিষ্টভাষী ও বিনয়ী আবু বকর কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি সাধারণ ছাত্র হিসেবে হলের ৪০৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন। সারাদিন পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। খরচ মেটাতে করতেন টিউশনি।
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাত দেড়টার দিকে হলের উভয় গ্র“প সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তারা হলের এক ব্লক থেকে অন্য ব্লকে ইট-পাটকেল ও বোতলে পেট্রোল ভরে আগুন ধরিয়ে পরস্পরের দিকে ছুড়ে মারে। এ সময়  ১০/১৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি হয়। ভাংচুর করা হয় অন্তত ২৫টি কক্ষ। সংঘর্ষের দেড় ঘণ্টা পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের ঘটনায় ২৫ জন আহত হন। সংঘর্ষের ঘটনায় হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারুকসহ ১৪ নেতাকর্মীকে আসামি করে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করা হয়। পরদিন ভোরে ফারুকসহ ৮ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে আবু বকরের মৃত্যুর সংবাদ ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার এবং নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে তারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ১০/১২টি গাড়ি এবং প্রক্টর অফিসে ভাংচুর চালায়। ভিসি অফিস ঘেরাও করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। প্রায় দেড়ঘণ্টার বিক্ষোভে পুলিশ অর্ধশতাধিক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আবু বকর মারা যাওয়ার ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন গণমাধ্যমে ‘এটা কোনো ব্যাপার না, এমনটি ঘটতেই পারে। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে মন্তব্য করেন। এ মন্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে ক্যাম্পাসে আবারো বিক্ষোভের ঝড় উঠে।
এ ঘটনার তদন্ত রিপোর্টে আবু বকর হত্যা ও সংঘর্ষের ঘটনায় মূল ব্যক্তি সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারুকসহ তার সমর্থক আরও ৯ জনকে দায়ী করা হয়। একইসঙ্গে হল প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। সিন্ডিকেট এই খুনের শাস্তি হিসেবে সাময়িক বহিষ্কারের ব্যবস্থা নেয় মাত্র। গুরু দণ্ডে লঘু শাস্তিতে প্রকারান্তরে পুরস্কৃত হয় ছাত্রলীগ।
‘কীর্তিমান’ ছাত্রলীগের বাংলা বর্ষবরণ: অর্ধশত তরুণী লাঞ্ছিত
১৪ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে তরুণী লাঞ্ছনার রেকর্ড গড়ে ছাত্রলীগ। ওই দিন কমপক্ষে ৩০ তরুণীসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে অর্ধশতাধিক নারী লাঞ্ছনার শিকার হয়। এছাড়া টিএসসির কনসার্টে এক শিল্পীকে মারধর করে ছাত্রলীগের উচ্ছৃঙ্খল নেতারা। সন্ধ্যার পর টিএসসির কনসার্টের আশপাশ এলাকায় সম্ভ্রম রক্ষায় তরুণীদের চিৎকার ও ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। এক তরুণীকে বিবস্ত্রও করে ফেলা হয়।
এ ব্যাপারে রমনা থানার উপ-পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়ের বিবৃতি ছিল, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তরুণীদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে। তবে তাদের কেউই নির্যাতন সম্পর্কে লিখিত অভিযোগ করতে রাজি হননি। এসব ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে এসে নগরবাসী আতঙ্ক ও উদ্বেগ নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। রাত ১০টা অবধি টিএসসি, কলাভবন, মলচত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গেট ও শাহবাগ এলাকায় এ লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে। নারীদের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ওইদিন রাত পর্যন্ত পুলিশ স্বীকার করলেও পরদিন তা বেমালুম অস্বীকার করে।
গোয়েন্দা সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রমতে, সন্ধ্যা নামতেই টিএসসির সামনের গেটে দু’দফায় আটজন, পেছনের গেটে পাঁচজন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরের প্রবেশদ্বারে চার তরুণী লাঞ্ছিত হন। দুষ্কৃতিকারীরা চার যুবতীর কামিজ ছিঁড়ে ফেলে, ওড়না টেনে নিয়ে যায় এবং ঝাপটে ধরে। টিএসসির সামনের গেটে নির্যাতনের শিকার হন পাঁচ ছাত্রী। ছাত্রী নির্যাতনকারীরা অধিকাংশই জিয়াউর রহমান হল, মাস্টারদা সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ছাত্রলীগ কর্মী।
রাত সোয়া ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত রাজু ভাস্কর্যে ২০/২২ জন ছাত্রী ও যুবতী লাঞ্ছিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তবান সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি কবি জসীম উদ্দীন হলের ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুর রহমান জীবন রাত সোয়া ৮টার দিকে মঞ্চে ব্যান্ডশিল্পী মাকসুদের ‘মেলায় যাইরে’ গান পরিবেশনের আগ মুহূর্তে ছাত্রলীগ ঢাবি শাখার সভাপতি টিপু ও সাধারণ সম্পাদক বাদশার নাম ঘোষণা না করায় ছাত্রলীগ কর্মীরা ঐ শিল্পীকে মারধর করে। এ সময় ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সোহেল রানা টিপু মাইকে আগামী দু’বছরের জন্য শিল্পী মাকসুদকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। এ সময় হট্টগোলের মধ্যে ছাত্রলীগ কর্মীরা কনসার্টে আসা ছাত্রী ও তরুণীদের টানা-হেঁচড়া শুরু করে।
 মেয়েদের চুলাচুলি
এবারও ছাত্রলীগ। ২৮ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৬৪তম জন্মদিন পালন করতে গিয়ে ছাত্রলীগের মহিলা কর্মীরা প্রকাশ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। নেতাকর্মীদের সামনে হামলা, ব্যাপক ধস্তাধস্তি, চুলাচুলিতে জড়িয়ে পড়েন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইডেন কলেজ শাখার মেয়েরা। এ হামলা ও সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়।
মিছিলে সামনে দাড়ানোকে কেন্দ্র করে বাকবিতন্ডার জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যাডোর সামনে আসা মাত্রই হঠাৎ করে পেছন থেকে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি নিঝুম এবং সাধারণ সম্পাদক তানিয়ার কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেত্রীদের ওপর হামলা চালায়। এতে শুরু হয় উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তি। তারা একে অপরের চুল ধরে রাস্তায় ফেলে দেয়। পরনের সালোয়ার-কামিজ ধরে টানাটানি করতে থাকে। ধস্তাধস্তিতে প্রধানমন্ত্রীর ছবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন পদদলিত হয়।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটে ভর্তি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদে ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে অনার্স প্রথম বর্ষে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তিতে আবেদন করা অর্ধশতাধিক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট ধরা পড়ে। বিজ্ঞান অনুষদের ‘ক’ ইউনিটে ২৪টি, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ১৮টি, বাণিজ্য অনুষদের ‘গ’ ইউনিটে ৮টি ভুয়া সার্টিফিকেট ধরা পড়ে।
সংশ্লিষ্ট অনুষদ কর্তৃপক্ষ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তির আবেদন করা ব্যক্তির সার্টিফিকেট মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে যাচাইয়ের জন্য পাঠায়। যাচাই-বাছাই শেষে মন্ত্রণালয় যাদের বিষয়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ পায়নি, তাদের সার্টিফিকেটগুলো সঠিক নয় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখিত তথ্য দেয়। কয়েক বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক ভুয়া শিক্ষার্থী ভর্তির প্রমাণ পাওয়ায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সার্টিফিকেট যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
ক ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়কারী ও জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এমএ বাশার ২৪৬টি মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র যাচাই করতে ২১ ডিসেম্বর’০৯ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব এসএম অলিউলাহ স্বাক্ষরিত পত্রে ২০ জানুয়ারি ওই চিঠির উত্তর দেয়া হয়। এতে জানানো হয়, ২৪৬টি মুক্তিযোদ্ধা সাময়িক সনদপত্রের মধ্যে অত্র মন্ত্রণালয়ের রেকর্ড যাচাই-বাছাই করে ২৪টি সনদের সত্যতা পাওয়া যায়নি। এছাড়া সাতটি সনদ কেন্দ্রীয় সংসদ কর্তৃক ইস্যুকৃত হলেও রেজিস্টার দফতরে তাদের নাম-ঠিকানা সঠিক পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধুর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার
শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য ঢাবি থেকে বঙ্গবন্ধুকে বহিষ্কারের ৬১ বছর পর ১৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় তার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। ১৯৪৯ সালের ২৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল বহিষ্কারের এই আদেশ দেয়। আইন বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র থাকা অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমান বহিষ্কার হন। ১৯৪৯ সালের ৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে ডাকা ধর্মঘটে নেতৃত্বদানের অভিযোগে ওই বছরের ২৬ মার্চ শেখ মুজিবসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে ১৫ টাকা জরিমানা করা হয় এবং ১৭ এপ্রিলের মধ্যে মুচলেকা দিতে বলা হয়। এদের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান জরিমানা এবং মুচলেকা না দেয়ায় বহিষ্কার হন। বাকিরা জরিমানা ও মুচলেকা দিয়ে বহিষ্কারের শাস্তি থেকে রেহাই পেয়েছিলেন।
ঢাবিতে সড়ক দুর্ঘটনা: বিক্ষোভ ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ে ২৬ আগস্ট দুপুরে বহিরাগত গাড়ির ধাক্কায় পালি ও বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া আহত হন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ৯/১০টি গাড়ি ভাংচুর করে। ২৫ নভেম্বর ঢাবি ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সাধন কুমার দাস বহিরাগত গাড়ি চাপায় আহত হওয়াকে কেন্দ্র করে টিএসসিসহ আশপাশের এলাকায় কমপক্ষে ২০/২৫টি গাড়ি ভাঙচুর ও ২টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত গাড়ি প্রবেশের প্রতিবাদে ১৩ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে কার্জন হল এলাকায় সদরঘাট ও গাবতলী লাইনের ৭ নম্বর গাড়িসহ ফের ৭/৮টি গাড়ি ভাঙচুর করে শহীদুলাহ হলের ছাত্ররা। এ বছরের প্রথম দিকে বহিরাগত গাড়ির ধাক্কায় এক কর্মচারীর স্ত্রী আহত হন। এমনকি দু’বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। অনেক দাবি-দাওয়া করার পরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
অনলাইনে ভর্তি
এবছর ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মত চালু করা হয় অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম। এতে ভয়াবহ ভুল ও গরমিল ধরা পড়ে। মাদ্রাসা বোর্ড থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জিপিএ কমিয়ে দেয়া, স্কুল শিক্ষা বোর্ড থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জিপিএ বাড়িয়ে দেয়া, যশোর এবং বরিশাল বোর্ড থেকে পাস করা ইত্যাদি নানাবিধ কারণে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক বিড়ম্বনা ও হয়রানির শিকার হয়। ফলে অনেকে ভর্তির জন্য আবেদনই করতে পারেনি। আবেদনের পুরো পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তারপরও খুশির খবর হলো এ পদ্ধতির মাধ্যমে ঢাবি ডিজিটালযুগে প্রবেশ করল।
হল রাজনীতি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরা উপলক্ষে বিমানবন্দরে সংবর্ধনা কর্মসূচিতে অংশ না নেয়ায় ৩০ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে শহীদুলাহ হলের ৪৪ জন ছাত্রকে জোর করে হল থেকে বের করে দেয় ছাত্রলীগ নেতা মুন্না। সারারাত কার্জন হল এলাকায় খোলা আকাশের নিচে নির্ঘুম অবস্থান করে ওই ছাত্ররা।
বলা যায়, ছাত্রলীগের নেতাদের কাছে হল প্রশাসন একেবারেই তুচ্ছ বিষয়। হল পরিচালনা করে ছাত্রলীগের নেতারাই। তাইতো শহীদুলাহ হলের ছাত্রলীগ সভাপতি শাহরিয়ার আজম মুন্নার এমন দম্ভোক্তি, ‘তারা হলের অবৈধ স্টুডেন্ট। তাই হল থেকে বের করে দিয়েছি।’ অবৈধ স্টুডেন্ট হলে প্রশাসন বের করে দেবে, আপনি কেন তাদের হল ত্যাগে বাধ্য করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ‘হল প্রশাসন কি তাদের হলে তুলেছেন? আমরা তাদের হলে উঠিয়েছি।’
অন্যদিকে শেখ রাসেলের ৪৬তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত মিছিলে না যাওয়ায় ১৮ অক্টোবর সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ৭০ ছাত্রকে রড ও স্ট্যাম্প দিয়ে বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। হল ছাত্রলীগ নেতার হাত থেকে রক্ষা পাননি সিনিয়র ছাত্ররাও।
মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রদের শিক্ষা জীবন নিয়ে ছিনিমিনি
১ ডিসেম্বর ঢাবিতে ১০টি বিষয়ে অনার্সে ভর্তিতে আরোপিত শর্তের ব্যাপারে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ স্থগিত করেন চেম্বার জজ আদালত। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের ওপর চেম্বার বিচারপতির স্থগিতাদেশের ফলে আবারও ১০টি বিষয়ে ভর্তিতে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্ররা।
ঢাবির কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ১০টি বিষয়ে ভর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আরোপিত শর্তের সিদ্ধান্তকে ১১ নভেম্বর হাইকোর্ট স্থগিত করেন। ভর্তি হওয়ার সুযোগ চেয়ে তিন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রিট করেন। ওই স্থগিতাদেশ বাতিল চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সুপ্রিমকোর্টের চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করলে ২৯ নভেম্বর হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন চেম্বার বিচারপতি এসকে সিনহা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবার স্থগিতাদেশের স্থগিত চাইলে চেম্বার আদালতের একই বিচারপতি এসকে সিনহা হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। একইসঙ্গে হাইকোর্টের আদেশের বির"দ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানো হয়। আগামী ১০ মার্চ এর শুনানি হবে।
ঢাবির ২০১০-১১ সালের ভর্তি নির্দেশিকায় কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ১০টি বিষয় ইংরেজি, বাংলা, ভাষাবিজ্ঞান, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজবিজ্ঞান, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ও উন্নয়ন অধ্যয়ন বিষয়ে অনার্সে ভর্তিতে শর্তারোপ করা হয়। শর্ত হ"েছ এইচএসসি বা সমমান পর্যায়ের পরীক্ষায় বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে পৃথক ২০০ নম্বর থাকতে হবে। এর ফলে বাংলা ও ইংরেজিতে ১০০ নম্বর করে পড়ে আসা এইচএসসি সমমান আলিম পাস করা মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা ভর্তির যোগ্যতা হারায়।
কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শর্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মাদ্রাসাপড়ুয়া তিন শিক্ষার্থী হাইকোর্টে রিট করে। রিটের শুনানি শেষে আদালত ১১ নভেম্বর হাইকোর্ট আরোপিত শর্ত স্থগিত করেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই স্থগিতাদেশ বাতিল চেয়ে সুপ্রিমকোর্টের চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করলে আদালত হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। কর্তৃপক্ষ আবার শর্তের স্থগিতাদেশের স্থগিতাদেশ চাইলে চেম্বার আদালত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন। সর্বশেষ ১৫ ডিসেম্বর মাদ্রাসা ছাত্রদের রিটের শুনানি এবং রুলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে হাইকোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করে শর্ত বাতিল করেন। ওই রায়ের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে ১৮ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো ‘খ’ এবং ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করেন।
এভাবে আইনি লড়াই চলতে থাকলে আরও কয়েক মাস লাগবে চূড়ান্ত পর্যায় পৌঁছতে। ফলে রিট আবেদনকারী আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পাল্টাপাল্টি লড়াইয়ে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে ভর্তিচ্ছু সবারই। দেখা দিচ্ছে ভর্তি অনিশ্চয়তাও। অন্যদিকে বাণিজ্য অনুষদভুক্ত ‘গ’ ইউনিট ও বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। শিগগিরই এসব অনুষদে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে। ফলে তাল মিলিয়ে চলতে না পারায় ‘খ’ ও ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের সেশনজটে পড়বে।
এভারেস্ট জয়ী ইব্রাহীমকে ব্লো প্রদান
২ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র এভারেস্ট বিজয়ী মুসা ইব্রাহীমকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লো প্রদান করা হয়েছে। ক্রীড়াক্ষেত্রে অনন্য কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্লো প্রদান করে থাকে। এদিন তার সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক তাকে এ সম্মাননা প্রদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. হার"ন-অর-রশিদ এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. দিদার-উল আলম এবং পরিচালক অধ্যাপক শওকতুর রহমান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ রেজাউর রহমান।
অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক মুসা ইব্রাহীমের দৃঢ়সংকল্প, নিরহঙ্কার ও মানবতাবোধসম্পন্ন মনোভাবের ভূয়সী প্রশংসা করেন। মুসা ইব্রাহীম জানান, আগামী ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সমন্বয় একটি দল এভারেস্ট বিজয়ে অংশগ্রহণ করবেন। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সারাদেশে ১৬ কোটি গাছ লাগানোর পরিকল্পনার কথা উলেখ করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকেই এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন মুসা।
 ছাত্রীদের মিছিলে হামলা
এছাড়াও ক্যাম্পাসের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আলোচিত ঘটনা হলো, ক্যাম্পাসে প্রধানমন্ত্রীর আগমনের প্রতিবাদে ১ ফেব্র“য়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল আয়োজিত ছাত্রীকর্মীদের কালো পতাকা মিছিলে ছাত্রলীগের নগ্ন হামলা । পুলিশের উপস্থিতিতে এ হামলায় ১৪ ছাত্রী আহত হন। জহুরুল হক হলের ছাত্রলীগ সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী সুমন নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়।
ছাত্রী পেটানো
একুশে ফেব্র“য়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে যাওয়ার সময় টিএসসিতে পুরনো ঢাকার এক ছাত্রীকে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও কটুক্তি করে ছাত্রলীগের মাস্টারদা সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ও কবি জসীম উদ্দীন হলের ছয় নেতাকর্মী। এসময় ওই ছাত্রীর সঙ্গে থাকা অভিভাবকরা এর প্রতিবাদ জানালে বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির বাসভবনের সামনে ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের গতিরোধ করে অশালীন ভাষায় গালাগালি করে। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা ওই ছাত্রীর জামা ধরে টানটানি শুরু করলে অভিভাবকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ছাত্রলীগ কর্মীরা রড ও লাঠিসোটা দিয়ে ছাত্রী ও তার অভিভাবকদের নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করে। সংঘর্ষে ওই ছাত্রীসহ পাঁচজন আহত হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একটি দৈনিকের সাংবাদিক বলেন, একটি মেয়েকে যেভাবে পেটানো হয়েছে, তা বর্ণনা করা অসম্ভব। এ ঘটনায় ৫ জনকে বহিস্কার করা হয়।
বিলুপ্তপ্রায় তালিপাম সংরক্ষণ
এ বছরের ২০ জুলাই বিলুপ্তির শঙ্কা থেকে রক্ষা পেয়েছিল পৃথিবীর একমাত্র ব্যতিক্রম প্রজাতির তালিপাম গাছ। সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে বিলুপ্তপ্রায় এ গাছের চারা রোপণ কার্যক্রম শুরু করে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। ভিসি ভবন চত্বরে এ গাছের চারা রোপণ করা হয়। পৃথিবীতে বিলুপ্তপ্রায় একমাত্র প্রজাতির তালিপাম গাছটি প্রায় ৭০ বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রো-ভিসি ভবন চত্বরে প্রাকৃতিক পরিবেশে জন্মেছিল। ফুল ফোটার পর এ গাছটি সম্প্রতি মারা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ ও আরবরিকালচার দফতর এ বিরল প্রজাতির গাছের বীজ সংরক্ষণ এবং তা থেকে চারা উৎপন্ন করে।
রমনা মন্দিরে ভাংচুর
৩০ অক্টোবর রাতে রাজধানীর রমনা কালীমন্দিরে রামপ্রসাদ ও সারদা দেবীর মূর্তি ভাংচুর করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ হলের ৩ ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশি তথ্যানুসারে জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগ নেতা উৎপল সাহা গ্র“পের কর্মীরা মূর্তি ভাংচুর করেছে।
শিক্ষক লাঞ্ছিত
১১ মে তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন ও কয়েকজন সুযোগবাদী শিক্ষকের ইন্ধনে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ শোগান দিয়ে ভিন্নমতের দু’শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। লাঞ্ছিত শিক্ষকরা হলেন সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ও যুবাইর মোঃ এহসানুল হক। সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগ ক্যাডার মোঃ বাতেন, টগর, মহিরের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের আরও ২০-২৫ কর্মী অতর্কিত ক্লাসে প্রবেশ করে শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে ক্লাস থেকে বের করে দেয়। এ সময় ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হামলায় ৭ সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হয়।
সাংবাদিক আহত
৭ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে টিএসসিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় উত্ত্যক্তকারী ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ৬ সাংবাদিক আহত হন। সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী শাকিলা শারমিন রোকেয়া হল থেকে টিএসসির দিকে আসার সময় জসীম উদ্দীন হলের ছাত্রলীগ কর্মী মহিদুল ইসলাম মাহী (লোক প্রশাসন, ৩য়বর্ষ), রুবায়েত (দর্শন, ২য় বর্ষ), সোহেল (বাংলা ২য়বর্ষ) ও রুমি (বাংলা, ২য় বর্ষ) তাকে উত্ত্যক্ত করে। ওই ছাত্রী প্রতিবাদ জানালে তারা অশ্রাব্য ভাষায় তাকে গালাগাল দেয়। খবর পেয়ে তার কয়েকজন সাংবাদিক বন্ধু টিএসসির ডাসের কাছে এলে উত্ত্যক্তকারীরা তাদের ওপর তিন দফা হামলা চালায়।
দলীয় পরিচয়পত্র
ছাত্রলীগের হাতে হয়রানি আতঙ্কে দলীয় পরিচয়পত্র বহন ছিল ২০১০ সালে আলোচিত একটি বিশেষ ঘটনা। ক্লাসের লেখাপড়া কিংবা আবাসিক হলের সিট নিয়ে কোনো ধরনের মতবিরোধ দেখা দিলেই তা রাজনৈতিক রূপ নেয়, বিরোধী রাজনৈতিক আদর্শের অভিযোগ দিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। মারধর করে তুলে দেয়া হতো পুলিশের হাতে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরাই বেশি হয়রানির শিকার হন। এ নির্যাতন ও হয়রানি থেকে বাঁচতে অনেক সাধারণ ছাত্রকে বহন করতে হয়েছে আওয়ামী লীগের ‘দলীয় পরিচয়পত্র’। জেলা, থানা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে নেয়া ‘দলীয় পরিচয়পত্র’ নিয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ক্লাসে অংশ নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। দলীয় পরিচয়পত্র বহনকারী শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করলেও এর প্রমাণ সাংবাদিকদের হাতে চলে আসে।
২০ বছরের কংকাল ডাকসু
শীঘ্রই নির্বাচন
লিংকন মাহমুদ, ঢাবি প্রতিনিধি
প্রাচ্যের  অক্সফোর্ড ঢাকা বিশববিদ্যালয়। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ। শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র ও সমাজ সার্বিকভাবে রাজনৈতিক আন্দোলনের সূতিকাগার। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন,বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ গনতান্ত্রিক, জাতীয় মুক্তি ও স্বাধিকার আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থী। আর যুগ যুগ ধরে সেই অকুতোভয় সৈনিকদের নেতৃত্ব দিয়েছে ঢাকা বিশববিদ্যালয় কেন্দ্রিয় ছাত্রসংসদ-ডাকসু। কালের আবর্তে আজ তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। দ্বিতীয় সংসদ হিসেবে পরিচিত ডাকসু এখন ঐতিহ্যের কঙ্কাল। সেই গৌরবজ্জ্বল ইতিহাসের ধারক বাহক ডাকসু গত ২০ বছর যাবত অকার্যকর হয়ে আছে। প্রতিবছর ডাকসু নির্বাচনের কথা থাকলেও তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রসংগঠনগুলোর সদিচ্ছার অভাবে হচ্ছে না বলে অভিজ্ঞমহল মনে করে। কর্তৃপক্ষ বলছে সুস্থধারার রাজনীতির জন্য ডাকসুর বিকল্প নেই। ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ বলছে তারা নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। অপরদিকে ছাত্রদল ডাকসু নির্বাচনের জন্য ক্যাম্পাসে সহ অবস্থানের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে জোর দিয়েছে। বিশেষজ্ঞ মহল মনে করে, বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ফিরিয় আনা,নানাবিধ সমস্যার সমাধানসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ডাকসু ও হল ছাত্রসংসদের নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বর্তমানে ডাকসুর অস্তিত্ব অনুভব করা যায় ভবনের নিচতলায় ডাকসু সহকারী ক্যামেরাম্যান ও সংগ্রাহক গোপাল দাসের একক প্রচেষ্টায় নানা ঢঙের ফ্রেমে বেঁধে রাখা ঐতিহাসিক ছবিগুলোর প্রদর্শনীর মাধ্যমে। উপরের তলায় ভাস্কর্যের জন্য একটি বেসরকারি অফিস বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে, জাতীয় কয়েকটি দৈনিক রাখা হয় একটি কক্ষে, বিভিন্ন সংগঠন তাদের দলীয় প্রোগ্রাম, সভা, সেমিনার করে থাকে একটি অপর কক্ষে।
১৯২১ সালে উপমহাদেশের প্রথম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর মাত্র বছর দু’য়েক পর ১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) সৃষ্টি হয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের এক টাকা চাঁদা দিয়ে এর সদস্য হতে হত। এভাবেই যাত্রা শুরু হয় দেশের স্বাধিকার, ভাষার সংগ্রাম ও স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সুতিকাগার ডাকসুর। ১৯৭০ সালে ডাকসুতে পরোক্ষ নির্বাচনের বদলে প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি চালু হয়। প্রথম জিএস হিসেবে ১৯২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে যোগেন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের নাম পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৩ বছরের ইতিহাসে মোট ৩৬ বার ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে স্বাধীনতার পর মাত্র ছয় বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রথম ডাকসু নির্বাচন হয়।
সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৬ জুন। এ নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেলে আমান উল্লাহ আমান ভিপি এবং খায়রুল কবির খোকন জিএস নির্বাচিত হন। এরপর আর ডাকসু নির্বাচন হয়নি। ১৯৯১ সালের ১২ জুন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মনিজ্জামান মিঞা ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেছিলেন। তখন ছাত্রনেতার ছাত্রত্ব বজায় রাখতে এবং প্রার্থী হওয়ার জন্য বিশেষ ভর্তির দাবী করেন। এ নিয়ে সৃষ্ট সহিংসতায় তখন নির্বাচন ভডুল হয়ে যায়। ১৯৯৪ সালের এপ্রিলে তৎকালীন উপাচার্য ড. এমাজ উদ্দিন আহমদ ও ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেন। ছাত্রলীগ নির্বাচনের নির্বাচনের পরিবেশ না থাকার অভিযোগ আনলে তফসিল ঘোষিত হলেও নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ১৯৯৫ সালে নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হলেও নির্বাচন হয়নি। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী কমপক্ষে ছয়বার সংবাদ মাধ্যমকে ডাকসু নির্বাচনের সময়সীমার কথা জানান। সূত্র মতে, ছাত্রদলের বিরোধিতায় তফসিল ঘোষনা পন্ড হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু হলে ছাত্রদল নেতা আরিফ হোসেন তাজ খুন হন। এ ঘটনা তদন্তের জন্য গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের সুপারিশে ডাকসু ভেঙ্গে দিয়ে ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলে। ১৯৯১ সালের ২৭ মে সিন্ডিকেটের সভায় ডাকসু ভেঙ্গে দেয়া হলেও নির্বাচন আর দেওয়া হয়নি। ডাকসুর জন্য গঠিত নতুন (সংশোধিত) গঠনতন্ত্রে ডাকসু ভাঙ্গার ৪ মাসের মধ্যে আবার নির্বাচন করার কথা বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বরের আগেই ডাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত তা হয়নি। ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা দিয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্রলীগের বিরোধিতায় তা পন্ড হয়ে যায়। এভাবে কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রসংগঠনগুলোর পরস্পর বিরোধী অবস্থানের ফলে ছাত্ররা ডাকসুর সুফল থেকে বঞ্চিত সাধারন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক,ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মী, রাজনৈতিক,পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকদের মতে, ডাকসু নির্বাচন না হওয়া গনতন্ত্র চর্চা ব্যহত হচ্ছে এবং সাস্কৃতিক বন্ধ্যাত্ব ও নেতৃত্বশূন্যতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে রাজনীতির প্রতি মেধাবীদের বিরূপ মনোভাব তৈরী হচ্ছে, ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে এবং দখলদারি ও মাস্তানতন্ত্র স্থায়ী রূপ নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিক্ষকরা মনে করছেন ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিতে সুস্থধারা ফিরে এলে তার ছোয়া মূলস্রোতের রাজনীতিতেও লাগবে। ফলে বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোতে সৎ,যোগ্য ও মেধাবীদের পদচারনায় মুখরিত হবে। অভিজ্ঞ মহল মনে করে প্রধান দুই দলের হলে থাকা নিশ্চিত করতে না পারলে ডাকসু নির্বাচন কল্পনাই থেকে যাবে। যখন উভয় দল মনে করবে ডাকসু নির্বাচন দিলে তারা জয়লাভ করবে তখন বিনা বাধায় তারা উভয়ে নির্বাচন মেনে নেবে। ক্যাম্পাসে উভয় দলের ক্ষমতার ভারসাম্য সমান না করে নির্বাচন করতে গেলে রক্তপাত হওযার সমুহ সম্ভাবনা থেকে যায়। ‘৯০ সালের পর থেকে ডাকসু নির্বাচনের জন্য যতবারই তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে ততবার এর বাস্তব রূপ দেখা গেছে। তাই ডাকসু নির্বাচনের জন্য ক্যাম্পাসে ক্ষমতার ভারসাম্য দরকার। ক্যাম্পাসে ক্ষমতার এ ভারসাম্য না আনতে পারলে এ নির্বাচন সবসময়ই স্বপ্নই থেকে যাবে।
ডাকসু ও হল সংসদের বর্তমান অবস্থাঃ
ছাত্র সংসদের কর্মকাণ্ডের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হল ইউনিয়নগুলোরও চলছে বেহাল দশা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি আবাসিক হলের ছাত্র সংসদের নির্ধারিত কক্ষ রয়েছে। বর্তমানে হল সংসদের এ কক্ষগুলো সংশ্লিষ্ট হলের বিতর্ক সংগঠনের কার্যক্রমে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিছু হলের সংসদ রুমরকে বানানো হয়েছে রিডিং রুমসহ বাঁধনের অফিস কক্ষ।
ডাকসু ব্যতীত সব নির্বাচন হয়ঃ
বিশ্ববিদ্যালয়ে একমাত্র ডাকসু ছাড়া অন্যান্য নির্বাচন, বিশেষ করে শিক্ষক সমিতি, সিন্ডিকেট, সিনেট, ডিন, কর্মচারী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে নিয়মিত। অনেক ছাত্রনেতা বলেছেন, শিক্ষক সমিতির সদিচ্ছা থাকলে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সুবিধা হত। তাদের অভিযোগ, শিক্ষকরা ভয় পাচ্ছেন ডাকসু নির্বাচন দিলে তাদের কর্তৃত্ব হ্রাস পাবে। বিভিন্ন অনিয়ম কর্মকাণ্ডে বাধা প্রাপ্ত হবে।
বাজেট বরাদ্ধঃ ডাকসু নির্বাচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মোটা অংকের বাজেট প্রণয়ন করে থাকে। ২০০৪-০৫ অর্থ বছরে ডাকসু নির্বাচনের জন্য ৭০ হাজার টাকা, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ২০০৬-০৭সালে অর্থ বছরে ৬ লাখ টাকা, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ১০ লাখ টাকা, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১০ লাখ টাকা সংশোধিত ৫ লাখ টাকা, ২০০৯-১০ অর্থবছরে সংশোধিত ৬ লাখ ৫৩ হাজার টাকা, ২০১০-১১ অর্থবছরে সংশোধিত ৭ লাখ টাকা। প্রতি বছর এ বরাদ্ধকৃত অর্থ ডাকসু নির্বাচনের জন্য ব্যয় করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না।
নির্বাচনের জন্য চাঁদা দেন শিক্ষার্থীরাঃ
ছাত্র-ছাত্রীরা ডাকসু বাবদ প্রতি বছর নির্ধারিত হারে চাঁদা দিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে ডাকসু বাবদ ২০ টাকা (কেন্দ্রীয় সংসদ বাবদ ১০ টাকা +হল সংসদ বাবদ ১০ টাকা) নেয়া হলেও বর্তমানে এই চাঁদার পরিমান বারানো হলেও প্রকৃত কাজের কিছু হচ্ছে না। দর্শন বিভাগের মাস্টারর্স শেষ বর্ষের ছাত্র শাহ্ আলম কিরন শিশির বলেন, ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের থেকে ডাকসুর নির্বাচনের জন্য টাকা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সাথে প্রতারণা করছেন। রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে ছাত্রদের মেধাকে শানিত করার জন্য ডাকসুর নির্বাচন ত্বরান্বিত করতে হবে।
ছাত্রনেতাদের বক্তব্যঃ
ছাত্রলীগ কেন্দ্রিয় সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন বাংলাবাজার পত্রিকাকে জানান, ডাকসু নির্বাচন এখন সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছে। ছাত্রদের অধিকারের স্বার্থে ডাকসুসহ সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংসদের নির্বাচন অপরিহার্য। তাছাড়া যেকোন সময় আমরা নির্বাচন করতে প্রস্তুত। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারনে নির্বাচন হচ্ছেনা বলে তিনি জানান। ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি নির্বাচনের পক্ষে আছে বলেও তিনি বলেন।
ছাত্রলীগ কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন বলেন, ডাকসু নির্বাচন হওয়া দরকার। যোগ্য নেতৃত্ব এবং ছাত্রদের অধিকার আদায়ের লক্ষে ডাকসু নির্বাচন হওয়া দরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা বলেন, ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্য ডাকসু নির্বাচন হওয়া দরকার। প্রশাসনের সুদৃষ্টির অভাবের ফলে মুলত ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে না।
ছাত্রদল কেন্দ্রিয় সভাপতি সালাউদ্দিন টুকু আমাদের প্রতিনিধিকে জানান, ছাত্রদের নেতৃত্বের বিকাশে ডাকসু নির্বাচন অবশ্যই দরকার। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সহ অবস্থান নিশ্চিত করা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হলে অবশ্যই আমরা ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। আমরা নির্বাচনের পক্ষে।
জাসদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রিয় সংসদ সভাপতি হোসাইন আহমেদ তফছির বলেন, ছাত্রসংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমন্বয়হীনতার ফলে ডাকসুর নির্বাচন হচ্ছে না। আমরা নির্বাচনের পক্ষে। সাধারণ ছাত্রদের অধিকারের জন্য ডাকসু নির্বাচনের বিকল্প নাই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে ছাত্রসংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ নির্বাচনের জন্য এগিয়ে আসা উচিত।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্যঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ডাকসুর নির্বাচন সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নাই। শীর্ঘই আমরা ডাকসু নির্বাচন দিব। এজন্য আমরা  জোরালোভাবে  প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছি। এখন নির্বাচনের জন্য ছাত্রসংগঠন গুলোকে  স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে।  তারা এগিয়ে আসলে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আর কোন বাধা থাকবে না। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্যগুলো ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে
লিংকন মাহমুদ,ঢাবি প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাস্কর্যগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে ফেলছে এর ঐতিহ্য। স্বাধীনোত্তর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অক্ষুন্ন রাখতে নির্মিত হয়েছিল ভাস্কর্যগুলো। কিন্ত অযতœ অবহেলায় তা আজ বিলীন হওয়ার পথে। বিজয় দিবসের দিনেও ভাস্কর্যগুলো আবর্জনার স্তপে পরিপূর্ণ। অসম্পূর্ণ নির্মাণ, সংস্কারের অভাব, সর্বাপরি অবকাঠামোগত অব্যস্থাপনাসহ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন , ক্যাম্পাসের ভাস্কর্যগুলো আমাদের স্বাধীনতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, অতীতে এ ব্যপারে কঠোর সিদ্ধান্ত আরোপিত না হলেও শিগগিরই তা সংরক্ষণে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ক্যাস্পাসে ফুলার রোডের সড়ক দ্বীপে নির্মিত ভাস্কর্যের বেহাল দশা । স্বাধীনতার চেতনা বহন করে ভাস্বযর্টি ১৯৯৮ সালে নির্মিত হয়েছে। এটাকে সমৃদ্ধ করতে আশেপাশে নির্মান করা হয়েছে শতাধিক বুদ্ধিজীবি ও শহীদদের ভাস্কর্য। প্রতিষ্ঠার ১২ বছর অতিক্রম হলেও  আজ অবধি  মূর্তিগুলোর নেমপ্লেট বসানো হয়নি। প্রায় অর্ধশত মূর্তির মাথা ও মুখ ক্ষয়ে যাওয়ায় বিকৃত হয়ে পড়েছে। ফলে দর্শণার্থীরা দেখে মুগ্ধ হলেও মূর্তিগুলোকে চিনতে প্রতিনিয়তই বিপাকে পড়ছে। এখানে নিরাপত্তারও চরম অভাব রয়েছে বলে অভিাযোগ পাওয়া গেছে  । পাশেই পুলিশ শূন্য সিকিউরিটি বক্্র পড়ে আছে । বিগত আমলে নিয়মিত পুলিশ পাহাড়ায় থাকলেও পরে তাদের উঠিয়ে নেওয়া হয়। এতে যেকোন সময় দুর্বৃত্তরা দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে বলে সংস্লিরা মনে করছে  । ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পাশেই রয়েছে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা । ভাস্কর্যটির মাথা ফেটে গেছে, ভেঙ্গে পড়েছে একটি হাত ও কাটা রাইফেল । প্রাচীর না থাকায় বিভিন্ন সংগঠন প্রোগ্রাম করতে গিয়ে ব্যানারটি ঝুলিয়ে  দেয় ভাস্কর্যে । ফলে ক্ষয়ে যাচ্ছে স্থাপনা, ভেঙ্গে যাচ্ছে মূর্তির বিভিন্ন অংশ  । এর পাশেই রয়েছে সন্ত্রাস বিরোধী রাজু স্মৃতি ভাস্কর্য । ১৯৯২ সালে গনতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্যের সন্ত্রাস বিরোধী মিছিলে নের্তৃত্বদানকালে নিহত রাজুর সম্মানে এটি নির্মিত । ভাস্কর্যাটির সাদা রং বদলে কালচে হয়ে গেছে । পাদদেশটি জঙ্গলে পরিপূর্ন হয়ে।   অনেক সময় পথচারীরা প্রসাব করে আশপাশ নোংরা করে রেখছে ।  জগন্নাথ ল ঢুকলেই চোখে পড়ে ভাস্কর্যের বেহাল দশা । অডিটোরিয়ামের পাশেই রয়েছে বুদ্ধদেবের মূর্তি। একটি হাত পড়ে আছে, অন্যটি  নির্মিত হয়নি। শরীরের অবয়ব গঠন সম্পন্ন হলেও মাথা ও মুখের চিহ্ন মাত্র নেই। তিন বছর আগে শুরু হয়ে বর্তমানে নির্মান কাজ বন্ধ রয়েছে । কলা ভবনের সামনেই রয়েছে অপরাজেয় বাংলা, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় বহন করে দাড়িয়ে আছে। নির্মাণের এক যুগ পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ভাস্কর্যটিতে বার্নিশ করা হয়নি। প্রাচীর না থাকায় শিক্ষার্থীরা জুতা পায়ে দিয়ে ভাস্কর্যটি নোংরা করছে। বঙ্গবন্ধু হলের সামনেই রয়েছে মা ও শিশু ভস্কর্য। দুঃখ জনক হলেও সত্য যে ভাস্কর্যটি আবর্জনা স্বরূপ মাটিতে ফেলে রাখা হয়েছে । ফলে হলে ঢুকতে গেলেও গুরুত্বপূর্ন এ স্থাপনাটি দর্শনাথীর্র চোখে আটকায় না।  ক্যাম্পাসের  ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের মূল ফটকেই রয়েছে ‘শান্তির পায়রা’ ভাস্কর্য। স্টীল দিয়ে নির্মিত এ ভাস্কর্যটির গায়ে অগনিত পোস্টার লাগানো রয়েছে। ফলে অগনিত ৃপোস্টারের ভিড়ে ভাস্কর্যটি নোংরা হয়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন আ্যন্ড জেন্ডার স্টাডিস বিভাগের শিক্ষার্থী আফসানা বলেন, ভাস্কর্যগুলো আমাদের মনে স্বাধীনতার প্রেরণা জাগিয়ে তোলে, তাই এগুলো  সংরক্ষনে বিশ্ববিদ্যাল কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সচেষ্ট হতে হবে।


প্রযুক্তি সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
লিংকন মাহমুদ,ঢাবি প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল প্রযুক্তি সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে । ৩৫ হাজার শিক্ষাথীর জন্য রয়েছে মাত্র দুটি সাইবার সেন্টার । এর মধ্যে এক-চুতর্থাংশ কম্পিউটার অকার্যকর বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে । ফলে সল্পসংখ্যক কম্পিউটার দিয়ে প্রয়োজন পূরন করতে প্রতিনিয়তই শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন আনুযায়ী প্রতিটি বিভাগের নিজস্ব কম্পিউটার ল্যাব থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ বিভাগে এর উপস্থিতি লক্ষ  র্কা যায়নি । কতৃপক্ষের অবহেলা ও সুদৃষ্টির আভাবেই এ সমস্যার  সৃষ্টি হয়েছে বলে সংস্লিষ্টরা মনে করছে। 
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) মোট ৩৫ টি কম্পিউটার রয়েছে । এর মধ্যে ১৭ টি কম্পিউটার অকার্যকর । অন্যগুলো সচল থাকলেও প্রায়ই ইন্টারনেট স্লো থাকে। ফলে শিক্ষাথীরা সাইবার সেন্টারে আসতে আগ্রহবোধ করেনা। এ সময় পাঁচ থেকে সাত জন শিক্ষার্থীকে কম্পিউটার নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় । বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ এক বছর আগে অচল ্কম্পিউটারগুলো মেরামত করে দেওয়ার কথা বললেও এখন পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সইবার সেন্টারের আবস্থা বিপরীত । এখানে মোট ২৩ টি কম্পিউটার রয়েছে । তন্মধ্যে ২ টি কম্পিউটার অকার্যকর । কস্পিউটারের সংখ্যা অল্প হওয়ায় লাইনে দাড়িয়ে প্রয়োজন পূরন করতে ব্যার্থ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা । বাধ্য হয়েই ছুটে যেতে হচ্ছে নীলক্ষেত কিংবা নিউমার্কেটের দিকে । কেউবা ওয়াফাইয়ের কল্যানে টিএসসির মূল ফটক ও বারান্দায় বসে মানবেতরভাবে বিনামূল্যে  ইন্টারনেট ব্যাবহার করছে। জায়গার তুলনায় বব্যাবহারকারী বেশী হওয়ায় এখানেও অনেক অসুবিধায় পড়তে  হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীরা আভিযোগ করে । বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র নসির জানায়, বিভাগ কতৃক এসাইনমেন্ট তৈরী কিংবা ইন্টারনেট ব্যাবহারের প্রয়োজনে সাইবার সেন্টারে গেলে জায়গা পাওয়া যায়না। ফলে যেতে আগ্রহ হয়না। জায়গা পাওয়া গেলেও স্লো গতির কারনে কাজ করতে অনেক সমস্যা হয় ।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী প্রতিটি বিভাগে কম্পিউটার ল্যাব থাকার কথা রয়েছে। কিন্ত অধিকাংশ বিভাগে এর প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ২৭ টি বিভাগের মধ্যে মাত্র নয়টি বিভাগে ল্যাব রয়েছে । এর মধ্যে ইসালামিক স্টাডিস ও ইতিহাস বিভাগে সমৃদ্ধ ল্যাব থাকলেও কতৃপক্ষের অবহেলার কারনে তা অচল রয়েছে । বাণিজ্য অনুষদের আটটি বিভাগে খোজ নিয়ে জনা যায়, অনুষদের  সবগুলো বিভাগে কম্পিউটার ল্যাব থাকলেও ইন্টারনেট অনেক স্লো গতিতে চলে । ফলে কোন কিছু ডাউনলোড করতে গেলে প্রচুর সময় নষ্ট হয় । শিক্ষার্থীরা দ্রুতগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ চালুর দাবি জানায় । হলগুলোতে সমস্যা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১৭ টি হল রয়েছে। বহুদিন ধরে হলগুলোতে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার কথা বললেও এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা এর সুফল পেতে শুরু করেনি। ফলে বহুমূল্যে ইন্টারনেট মোডেম ক্রয় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তরা অবিলম্বে হলগুলোতে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার দাবি জানায়।
কতৃপক্ষের বক্তব্য: এ ব্যাপারে টি এস সি পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, সাইবার সেন্টরের কিছু সমস্যা রয়েছে। সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে। খুব শিগগিরই ব্যাপারটি সমাধান করা হবে বলে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন।
 বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, টি এস সি সহ সকল সাইবার সেন্টারের উন্নয়ন করা হবে। পুরো ক্যাম্পাসে ওয়াইফাই ইন্টানেট চালু হবে । সেই সাথে হলগুলোতেও নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ দেওয়া হবে। 


শিক্ষক সমিতির নির্বাচন নিয়ে সরগরম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষক সমিতির নির্বাচন নিয়ে প্রচার প্রচারনায় সরগরম হয়ে ্উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস । পুরো দমে বইছে নির্বাচনি হাওয়া।  ইতিমধ্যে উভয় দলের নির্বাচনি প্যানেল ঘোষনা করা হয়েছে। ১৫ টি কার্যনিবাহী পদে অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনে  আওয়ামী ও বাম সমর্থিত নীল দল এবং বিএনপি জমায়াত সমর্থিত সাদা দল অংশগ্রহণ করবে । এবারের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ লড়ছে নিজেদের ইমেজ রক্ষায়, অন্যদিকে ডিন নির্বাচনের ভরাডুবি এড়িয়ে অস্তিত্ব রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি জমায়াত সমর্থিত সাদা দল প্যানেল। 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী ও বাম সমর্থিত নীল দল নীল দলের আহ্বায়ক ও প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোঃ আনোয়ার হোসেন সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক পদে হিসাবে পেয়েছেন জীব বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক সহিদ আকতার হোসেন, সহ-সভাপতি পদে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ আখতারুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ পদে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক  ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক পদে নীল দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী। এছাড়া সমিতির সদস্য পদে পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহীন, চারুকলা অনুষদের ডিন এবং অংকন ও চিত্রায়ন বিভাগের অধ্যাপক এমদাদুল হক মোহাম্মদ মতলুব আলী, ওষুধও প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন এবং ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এ আই মোস্তফা, আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন এবং ভুগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নাসরীন আহমেদ , ইউসুফ আলী মোল্লা,  ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ফখরুল আলম, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল  বারাকাত এবং অধ্যাপক অহিদুজ্জামান।
অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দল থেকে সভাপতি পদে নির্বাচন করবে সাদা দলের আহ্বায়ক ও কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সদরুল আমীন, সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মামুন আহমেদ, সহ-সভাপতি পদে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবুল বাশার, কোষাধ্যক্ষ পদে ব্যাংকিং বিভাগের অধ্যাপক মোঃ রফিকুল ইসলাম এবং যুগ্ম সম্পাদক পদে পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম। সদস্য পদে মনোনয়ন পেয়েছেন অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, অধ্যাপক ইয়ারুল কবীর, অধ্যাপক লায়লা নূর ইসলাম, অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন নুরুল ইসলাম অধ্যাপক হায়দার আলী এবং অধ্যাপক আবু আহমেদ ।
চলতি মাসের ২৯ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে । সকাল ১০ টা থেকে বেলা ২ টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। মনোনয়ন পত্র জমাদান ও প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হয়েছে । নির্বাচন কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন মকবুল-উর-রহমান।
সম্প্রতি ডীন নির্বাচনে নীল দল বিপুল ব্যাবধানে বিজয়ী হয়।  বিজয়ের এ সাফল্য ধরে রাখতে ব্যতিব্যাস্ত হয়ে উঠেছে নীল দল। অপরপক্ষে সাদা  দলের প্রার্থীরা লড়বেন নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায়। সেই সাথে বর্তমান সাধারন সম্পাদকের পদটি ধরে রাখতে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে সাদা দলের আহ্বায়ক ও সভাপতি প্রার্থী অধ্যাপক সদরুল আমিন বলেন, বর্তমান প্রশাসন আজ দূর্নীতিতে বাধা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে  নির্বাচিত প্রার্থীরা এ সমস্যার সমাধানে সচেষ্ট থাকবেন বলে তিনি আশবাদ ব্যক্ত করেন।
নীল দল আহবায়ক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচন অতীত থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে। গনতন্ত্র রক্ষায়ও এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ভবিষ্যতেও গনতন্ত্র রক্ষায় এ শিক্ষকরাই সংগ্রাম করে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।


সাধারন শিক্ষার্থীরাও চরম ভোগান্তিতে
মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে সিদ্ধান্তহীনতায় ঢাবি প্রশাসন,
 লিংকন মাহমুদ,ঢাবি প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (২০১০-১১) শিক্ষাবর্ষের অনার্স প্রথম বর্ষ ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে নানা জটিলতা রয়েই গেছে। বিশেষ করে মাদরাসা শিক্ষার্থীদেরকে ভর্তি করানো বা না করানোর বিষয়ে এখনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চুড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারেনি। আওয়ামীপন্থী কতিপয় শিক্ষক মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভর্তি ঠেকাতে এখনো সকল ধরনের সুক্ষ্ম ও কুটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যহত রেখেছেন বলে জানা যায়। এতে করে মাদরাসার শিক্ষাথীদের সাথে সাথে সাধারন শিক্ষার্থীরা ও বিভিন্নভাবে ক্ষতির সম্মুক্ষিন হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার সাক্ষাৎকারে তারিখ ঘোষণা করার পর পুনরায় সাক্ষাৎকার স্থগিত করছেন। যার কারনে শিক্ষার্থীদেরকে চরমভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। ভর্তি পরীক্ষার শেষ হওয়ার ১ মাস ২১ দিন পর এখনো (খ ও ঘ) ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা উভয় সংকটে সম্মুক্ষীন হচ্ছেন। এ ব্যাপারে অনেক অভিবাবকরা তাদের সন্তানদের ভর্তি নিয়ে বিভিন্নভাবে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গতকাল সোমবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাক্ষৎকার শুরু হওয়াতে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে আরো বেশি বিপাকে পড়েছেন। কেননা অনেক শিক্ষার্থীই এমন রয়েছেন যারা ঢাবি ও জবিতে একই সাথে চান্স পেয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাক্ষাৎকারের ৩ দিনের মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার টাকা নিয়ে ভর্তি হতে হয়। অন্যদিকে এত টাকা খরচ করে জগন্নাথে ভর্তি হয়ে আবার ঢাবিতে ভর্তি হওয়াটা যেমনিভাবে আার্থিক হয়রানি হবে তেমনি মানসিক হয়রানিও বটে। এ ব্যাপারে ঢাবি ও জবিতে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী মো আশিক জানায়, আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮২ তম হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্ত অনুযায়ী আমি  এখানে আইন বিভাগ পাব বলে আশা করি। কিন্তু ঢাবিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর যদি আমি আমার প্রত্যাশিত বিষয় পেয়ে যাই তাহলে আমি অবশ্যই ঢাবিতে ভর্তি হব। এক্ষেত্রে আমাকে আবার নতুন করে টাকা দিয়ে ঢাবিতে ভর্তি হতে হবে। ভর্তির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত এ টাকাটা বহন করা আমার পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব না। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি হাইকোর্ট দেয়া রায় এর পরও আমাদের ভর্তি নিয়ে গড়িমসি করে। তাহলে এখানে আমাদের কিছুই বলার নেই। তবে দেশের সেরা বিদ্যাপীঠ হিসেবে এ বিষয়টি নিয়ে এত টানা হেচড়া না করলে অনেক শিক্ষার্থী দারুন উপকৃত হবে বলে আমি মনে করি। এদিকে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের উপরে ১০ টি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া অবৈধ শর্তারোপের উপর হাইকোর্টের দেয়া একাধিকবার স্তগিতাদেশের পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের  টনক নড়ছেনা। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের পক্ষে হাইকোর্টের রায় দেয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাক্ষাৎকার নিতে টালবাহানা করছে। এতে করে মাদরাসা থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের সাথে সাথে সাধারন শিক্ষার্থীরাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ২৭ নভেম্বর প্রথম সাক্ষাৎকারের তারিখ ও ১৮ ডিসেম্বর পুনরায় তারিখ ঘোষনার পর কর্তৃপক্ষ বারবার সাক্ষাৎকার স্তগিত করছে। এতে করে সাধারন শিক্ষার্থীরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইনি পক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধানে যাওয়ার কথা বলে এখনো মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভর্তি ঠেকাতে নানা রকম সুক্ষ্ম কূট কৌশল চালাচ্ছেন বলে জানা যায়। এদিকে সাক্ষাৎকারের তারিখ জানতে ভিসি অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এবিষয়ে ডিনদের কাছ থেকে তথ্য জানা যাবে। অন্যদিকে কলা অনুষদ ডীন অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সাক্ষাৎকারের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। এ ব্যাপারে ভিসি সার  সিদ্ধান্ত নিবেন। ২৯ অক্টোবর “খ” ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হটকারী সিদ্ধান্তের কারনে ভর্তি কার্যক্রম এখনো থেমে আছে। সাক্ষাৎকারের জন্য ২ বার তারিখ ঘোষণা করার পরও হাইকোর্ট মাদরাসা শিক্ষার্থীদের পক্ষে রায় দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন টাল বাহানা করছে। অন্যদিকে বানিজ্য অনুষদভূক্ষ গ ইউনিট ও বিজ্ঞান অনুষদ ভূক্ত ক ইউনিটের সাক্ষাৎকার ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। সে সাথে তাদের ভর্তি কার্যক্রমও শেষ হয়েছে। অতি শীগ্র তাদের ক্লাশ শুরু হবে বলে ও জানা যায়। এদিকে একই সাথে ভর্তি পরীক্ষা অংশগ্রহনের পর এখনো হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের ভর্তি কার্যক্রম নিয়ে উদ্ধিগ্ন।
উলে¬খ্য যে, ২০০৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট এক সভায় গুরুত্বপূনূ কিছু বিষয়ে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের উপর শর্তারোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর ফলে বাংলা ও ইংরেজিতে ১০০ নম্বর করে পড়ে আসা এইচএসসি সমমান আলিম পাস করা মাদ্রাসা বোর্ডের শিক্ষার্থীদের ১০টি বিষয়ে ভর্তি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। অবৈধ শর্তারোপ করা ১০ টি বিষয় হল- ইংরেজি, বাংলা, ভাষাবিজ্ঞান, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজবিজ্ঞান, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ও উন্নয়ন অধ্যয়ন। গত কয়েক বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে ভর্তিতে মাদ্রসা ছাত্রদের ঠেকাতে নানা কৌশলের আশ্রয় নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। স্থগিতাদেশের আগে বিশ^বিদ্যালয়ের ২০১০-১১ সালের ভর্তি নির্দেশিকায় কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ওই ১০ টি বিষয়ে অনার্স ভর্তিতে উলে¬খিত এই শর্তারোপ করা হয়।
ঢাবি শিক্ষাথীরা সিটের বিনিময়ে রাজনীতি করতে বাধ্য হচ্ছে
লিংকন মাহমুদ,ঢাবি প্রতিনিধি
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২১ সালে ৮৭৭ জন শিক্ষার্থী ৩টি অনুষদ ১২টি বিভাগ ও তিনটি আবাসিক হল নিয়ে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে ১৩টি অনুষদ, ৬৬টি বিভাগ ও ৮টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। এখানে অনার্স, মাস্টার্স, এমফিল, পিএইচডিসহ মোট ৩০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী শিক্ষাগ্রহণ করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান এবং সুযোগ-সুবিধা দেশের অন্য যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে উন্নত হওয়ায় প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীর চাপ বাড়ছে। ধীরে ধীরে শিক্ষার্থী বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে আবাসিক হলের সংখ্যাও।
বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের জন্য একটি ছাত্রনিবাস ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক হলসহ ১৪টি হল রয়েছে। মেয়েদের জন্য আছে চারটি হল ও একটি ছাত্রীনিবাস। তারপরও মিটছে না আবাসন সমস্যা। প্রতি বছর নতুন শিক্ষার্থী এবং বিভাগের সংখ্যা বাড়লেও সে তুলনায় বাড়েনি আবাসিক হল। মোট শিক্ষার্থীর মাত্র এক-তৃতীয়াংশই হলে থাকতে পারছেন। আর বাকি দুই-তৃতীয়াংশ হলে উঠতে না পেরে অত্যন্ত ব্যয়বহুল বাড়ি ভাড়া করে অথবা মেসে থেকে পড়াশোনা করছেন। প্রতি বছর আবাসন ব্যয় বাড়লেও বাড়ছে না আবাসন সুবিধা । 
এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে আবাসন ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছিল, যত সিট থাকবে ঠিক ততজন শিক্ষার্থীই ভর্তি করা হবে। সময়ের সাথে সাথে আইনও পরিবর্তিত হয়েছে। অন্যদিকে কয়েক দশক ধরে আবাসিক হলগুলো ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রনেতাদের নিয়ন্ত্রণে চলছে। ফলে সিট বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়।
আসন সংখ্যা কম হওয়ায় প্রতিনিয়ত নিম্নমানের খাবারসহ অন্যান্য হাজারো সমস্যার মোকাবেলা করতে হচ্ছে এই বিদ্যাপিঠের শিক্ষার্থীদের। প্রতিটি হলের ডাইনিংয়ের খাবারের মান নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। হলগুলোতে খাবার সমস্যা ছাড়াও ছারপোকা, মশা-মাছি এবং রয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, যা পড়ালেখার অনুকূল নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ইতিহাস বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী জানান, তিনবার আবেদন করেও হলে সিট পাইনি। শত সমস্যা থাকলেও বাধ্য হয়ে মেসে থাকছি। প্রভোস্ট আমাদের প্রতি আন্তরিক নন, তিনি রাজনৈতিক নেত্রীর কথায় উঠবস করতে সবসময় আন্তরিক থাকেন। আর রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা এ সুযোগে চালান সিটের বিনিময়ে রাজনীতি।
এসএম হলের ২য় বর্ষের এক ছাত্র ফোকাস বাংলাকে জানান, প্রায় দুই বছর  বারান্দায় থাকার পর মাত্র আট দিন আগে রুমে উঠতে পারলাম।
জিয়া হলের রাফি জানান, আবাসন সংকট থাকলেও তার অনেকটাই রাজনৈতিক কারণে কৃত্রিমভাবে তৈরি। যদি হল প্রশাসন কঠোর হতো তবে এতটা আবাসন সংকটে ছাত্রদের পড়তে হতো না।
বঙ্গবন্ধু হলের এক ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে বাধ্য হয়ে রাজনীতি করছি। এর সম্পূর্ণ দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। প্রশাসন চাইলে এ সিট ব্যবসা বন্ধ করতে পারেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকটকে পুঁজি করে শুধু সিট প্রদান করে 'সিটের বিনিময়ে রাজনীতি' নামক কর্মসূচি বিগত দুই দশক ধরেই চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত ছাত্র সংগঠনগুলো। হলে উঠতে হলে শিক্ষার্থীদের কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী হতে বাধ্য করা হয়, এমন অভিযোগ প্রায় সব হলের ছাত্রদের। প্রথমে সিট না পেয়ে গণরুমে বা মসজিদে ওঠানো হয় এবং জুড়ে দেওয়া হয় অনেক শর্ত। যেমন ছাত্র সংগঠনের মিছিল করা, প্রতিদিন সকাল ও রাতে মিটিংয়ে বাধ্যতামূলক উপস্থিত থাকা, যে কোনো সময় ডাকলেই সাড়া দেওয়া, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, এমনকি কাউকে মারতে বললে তাকে মারধর করা ইত্যাদি।
আবাসন সংকটের চরমতম উদাহরণটি হলো 'গণরুম'। ঢাবিতে ২০ বছর আগেও গণরুমের অস্তিত্ব ছিল না। যে রুমটিতে সর্বসাকুল্যে ১০-১২ জন ছাত্র থাকতে পারে, সেখানে ২৫-৩০ জন ছাত্র ওঠানো হয় অথচ ছাত্রনেতারা একাই একটি রুমে থাকেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো হলেই আসন বণ্টনে হল প্রশাসনের জোরালো ভূমিকা নেই। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর হলের আবাসন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ পায় ছাত্রলীগ। শুধু শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র দেওয়া, নথিপত্র প্রদান, রেজাল্টশিট সংগ্রহ, উৎসবে উত্তম ভোজ প্রদান, জরুরি কাগজে স্বাক্ষর-এই গুটিকয়েক কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হল প্রশাসনের কার্যক্রম। নিয়ম অনুযায়ী সিট বরাদ্দ দেয় হল প্রশাসন কাগজে-কলমে। বাস্তবে নেতাদের অনুমতি ছাড়া হল কর্তৃপক্ষের বরাদ্দ পাওয়া কোনো ছাত্র হলে উঠতে পারে না।
সলিমুল¬াহ মুসলিম হল: ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সলিমুল¬াহ মুসলিম হল। আবাসিক ছাত্রের সংখ্যা ৪০৫, দ্বৈতাবাসিক ৪০০ এবং অনাবাসিক ছাত্রের সংখ্যা ১৫৩৪ জন। রাজনৈতিক কর্মী ছাড়া এ হলে সিট পায় না ছাত্ররা। হলের বারান্দাগুলো ভরে আছে খাট, লেপ-তোশক আর কাপড়চোপড়ে। হলের পূর্ব ব্লক ও পশ্চিম ব্ল¬ক বারান্দায় প্রায় তিন শতাধিক ছাত্র বাস করে। বারান্দায় নতুন করে কারো থাকার ব্যবস্থা করা একেবারেই অসম্ভব। এ হলে রয়েছে তিনটি গণরুম। ১১১৫৬ ও ১৫৯-এ রুম তিনটিতে ৯০ জন ছাত্র থাকছে। অথচ ছাত্রনেতারা ১৪২, ১৪০, ১৩৯ ও ২৫ নং রুমে ছয় জন থাকেন, যেখানে সুন্দরভাবে থাকতে পারতো ৩২ জন ছাত্র।
শহীদুল¬াহ হল: ১৯২১ সালে ঢাকা হল নামে প্রতিষ্ঠিত এই হলের আবাসিক ছাত্রসংখ্যা ৮০০, দ্বৈতাবাসিক ৪২৫ এবং অনাবাসিক ১৩২২ জন। এ হলের গণরুম হলো এক্সটেনশন বিল্ডিং ১-এর ১১০২, ১১০৮ এক্সটেনশন বিল্ডিং ২-এর ২১০২, ২১০৩, ২১০৭, ২১১১, ২১১৪, ২১১৫ নম্বর কক্ষগুলো। এখানে খাবারের মান তুলনামূলক ভালো।
জগন্নাথ হল: ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জগন্নাথ হল। আবাসিক ছাত্র ১০৭২, দ্বৈতাবাসিক ৬৫০ এবং অনাবাসিক ৭২৮ জন। রাজনৈতিক নানা গ্র“পিংয়ে এ হলের সাধারণ ছাত্ররা সর্বক্ষণ আতঙ্কে থাকে।
ফজলুল হক মুসলিম হল: ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্রসংখ্যা ৬৩৬, দ্বৈতাবাসিক ১৩০ এবং অনাবাসিক ৭০০ জন। ফজলুল হক মুসলিম হলের ২০০৫ এবং ৩০০৪ নম্বর গণরুমের ১৬টি সিটে ৮০ জনকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগ নেতাদের কথা না মানলে মারধর করে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। গণরুমে বসবাসকারী বেশ কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা মাঝে মাঝে রুমে জায়গা না পেয়ে ছাদে ঘুমাতে যান।
জহুরুল হক হল: ১৯৫৭ সালে ইকবাল হল নামে প্রতিষ্ঠিত। এ হলের আবাসিক ছাত্রসংখ্যা ৭২৫, দ্বৈতাবাসিক ৫৪৮ এবং অনাবাসিক ১১০৭ জন। জহুরুল হক হলের টিনশেড বিল্ডিংয়ের ৪, ২০ ও ২৪ নম্বর কক্ষ এবং এক্সটেনশন বিল্ডিংয়ের ১০১২, ১০১৩, ১০১৪, ৩০০১ ও ৪০০৯ নম্বর কক্ষগুলোকে গণরুমে পরিণত করা হয়েছে। এ হলের ছাত্রদেরও ছাত্রলীগ নেতার অনুগত থাকতে হয়। অন্যথায় প্রথমে স্থান হয় হাসপাতালের বেডে এবং পরে হলের বাইরের কোনো মেসে।
মাস্টারদা সূর্যসেন হল: ১৯৬৬ সালে জিন্নাহ হল নামে প্রতিষ্ঠিত এ হলের আবাসিক ছাত্রসংখ্যা ৫৭৭, দ্বৈতাবাসিক ৪৯০ এবং অনাবাসিক ২৩৮৭ জন। এ হলের গণরুম হলো ১৭৯, ১৮০, ১৮১, ১৮২, ২০১/ক, ২২৬, ২২৬/ক, ৩২৬, ৩২৬/ক, ৩২৯, ৪০১, ৪০১/ক, ৩৪৯, ৪২৬, ৪২৬/ক, ৪৪৯ নম্বর কক্ষগুলো। এ হলে বারোমাসই রাজনৈতিক কোন্দল লেগেই থাকে।
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল: ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবাসিক ছাত্রের সংখ্যা ৫৪০, দ্বৈতাবাসিক ৭২০ এবং অনাবাসিক ১২৮০ জন। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের গণরুম হলো ২২৮, ৩২৮, ৪২৮, ৫২৮, ই-২, ই-৪, ই-৬, ই-৮, ই-১০, ৪৪৮, ৪/ক, ৫/ক, ৬/ক নম্বর কক্ষগুলো।
কবি জসীম উদ্দীন হল: ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ হলের আবাসিক ছাত্রসংখ্যা ৩৯৭, দ্বৈতাবাসিক ৩১০ এবং অনাবাসিক ছাত্রসংখ্যা ১০৭৯ জন। ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত গণরুম হলো ১৩১, ২০৮, ২১২, ২১৫,২২৭ ও ৩২৭ নম্বর কক্ষগুলো। এ হলের আবাসন সংকট খুব বেশি।
স্যার এএফ রহমান হল: ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ হলের  আবাসিক ছাত্র ৬০২, দ্বৈতাবাসিক ১৩০ এবং অনাবাসিক ১১৭৮ জন। হলের ১০৩, ১০৫, ১০৮, ১১১, ১১৫, ৩০৮ ও ৩০৭ নম্বর কক্ষগুলোতে ছাত্ররা গাদাগাদি করে বসবাস করেন। এর মধ্যে ১০৫ নম্বর রুমে ৪৮ জন ছাত্র বাস করেন। হল ছাত্রলীগ কমিটি বিলুপ্ত হলেও বর্তমানে হলের ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতারা হল নিয়ন্ত্রণ করেন।
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল: ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ হলের আবাসিক ছাত্র ৪৮৪, দ্বৈতাবাসিক ৩৬০ এবং অনাবাসিক ৩১৮৪ জন। ১০৯, ১১০, ১১১ নম্বর কক্ষগুলো হচ্ছে  এ হলের গণরুম।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল: ১৯৮৮ সালে হলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আবাসিক ছাত্র ৪১৫, দ্বৈতাবাসিক ৩১৫ এবং অনাবাসিক ২,১০০ জন। বঙ্গবন্ধু হলে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত গণরুম হলো ২০৯/ক, ৩০১/ক, ৪০১/ক, ৫০১/ক, ২১৩/ক, ৩১৩/ক, ৪১৩/ক ও ৫১৩/ক ।
অমর একুশে হল : ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ হলের আবাসিক ছাত্রসংখ্যা ৪৪১, দ্বৈতাবাসিক ১৩৭ এবং অনাবাসিক ৬৪৩ জন। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রদের জন্য নির্দিষ্ট এ হলের আবাসন সংকট চরম। এ হলে ও রাজনৈতিক নেতাদের দৌরাত্ম থেমে নেই।
স্যার পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হল : ১৯৬৬ সালে আর্ন্তজাতিক হোস্টেল  নামে প্রতিষ্ঠিত এ হলের আবাসিক ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১২২ ও অনাবাসিক ৩ জন। যদিও এটি বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত বর্তমানে এ হলে শিক্ষকদের জন্যও বরাদ্দ দেয়া হয়।
রোকেয়া হল : ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত রোকেয়া হলের আবাসিক ছাত্রীসংখ্যা ১৪৯৭, দ্বৈতাবাসিক ৪৩০ এবং অনাবাসিক ৪৯২০ জন। খাবার ও অন্যান্য সমস্যা লেগেই থাকে। এ হলের গণরুম হলো সি-১, সি-২ ও ৩০৬ নম্বর কক্ষ।
শামসুন্নাহার হল : ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ হলের আবাসিক ছাত্রীসংখ্যা ৬৮৮, দ্বৈতাবাসিক ৬১২ এবং অনাবাসিক ৫৮৪৫ জন। ১৪১, ২৪১, ৩৪১, ৪৪১ ও ৫৪১ এ পাঁচটি কক্ষ হলো এ হলের গণরুম।
বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল: ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ হলের আবাসিক ছাত্রীসংখ্যা ৫৩৬, দ্বৈতাবাসিক ২৬৩ এবং অনাবাসিক ১৪৩২ জন।  এ হলের গণরুম ১০৮, ১০৯ ও ১১০এ তিনটি কক্ষ। হলের এক্সটেনশনের কাজ শেষ হলেও ছাত্রীরা উঠতে পারেনি।
বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল: ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের আবাসিক ছাত্রীসংখ্যা ৩৫১, দ্বৈতাবাসিক ৫৯০ এবং অনাবাসিক ১৭৬৪ জন। এ হলের ১১৯, ১২০, ১২১ ও ১২২ এবং মোহনা এই পাঁচটি কক্ষ গণরুম। এর মধ্যে মোহনায় ৩৭ জন ছাত্রী গাদাগাদি করে থাকছে।
নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ছাত্রীনিবাস: এম ফিল এবং পিএইচডি গবেষক ছাত্রীদের জন্য ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ ছাত্রীনিবাসের আবাসিক ছাত্রীসংখ্যা ১৫০ জন।
আইবিএ হোস্টেল: ফার্মগেটে অবস্থিত ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) ছাত্রদের জন্য নির্দিষ্ট এ হোস্টেলের আবাসিক ছাত্রসংখ্যা ১৩৪ জন।
শাহনেওয়াজ ছাত্রাবাস : মুহসীন হল ও এক্সটেনশন নিউমার্কেটের পেছনে এই ছাত্রাবাস অবস্থিত। এখানে প্রায় ৪০০ ছাত্র থাকে।
প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো সবসময় আবাসন সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়ে আসছে। নানা সময় এসব নিয়ে আন্দোলন হলেও বর্তমানে ক্ষমতাসীন সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের বাধায় কোনো ছাত্র তাদের সমস্যা নিয়ে আওয়াজ তুলতে পারছে না।
প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতা রায়হান কবির জানান, আবাসন সমস্যার সামাধানকল্পে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন করছি। আমাদের আন্দোলনকে বারবার বিভিন্নভাবে একটি মহল স্তব্ধ করে আসছে। কেন যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে  কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছেন না তা আমার বোধগম্য নয়।
সিটের বিনিময়ে রাজনীতির অভিযোগ সম্বন্ধে ছাত্রলীগের এক নেতা জানান, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। এটা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধবাদীদের অপপ্রচার।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (জাসদ) সভাপতি তাফছির আহমেদ বলেন, এ ব্যাপারে আমরা ভিসির সাথে সাক্ষাৎ করে কথা বলেছিলাম। খুব দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি আশ্বস্থ করেছেন।
আবাসন সংকট নিরসন সম্বন্ধে ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহবায়ক মহিদুল হাসান হিরু ফোকাস বাংলা নিউজকে জানান, আমরা ক্যাম্পাসে থাকাকালে আমাদের দাবীর মুখে আবাসন সংকট নিরসনে একুশে হল নির্মাণ করাসহ আরো কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। সরকারী ক্যাডার বাহিনী এখন আমাদের তো ক্যাম্পাসেই প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। সিটের বিনিময়ে রাজনীতি বন্ধ, আবাসন সংকট নিরসন, ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিতকরণ ও ছাত্রদের নিরাপত্তা বিধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
আবাসন সমস্যা ও হল প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তার ব্যাপারে এস এম হলের প্রভোস্ট ড. জি এম কাদের চৌধুরী জানান, আবাসন সমস্যা নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। তবে হল প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তার ব্যাপারটি তিনি অস্বীকার করেন।
সূত্রে জানা যায়, আবাসন সংকট আর ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রস্তাবিত এই ক্যাম্পাস ২০ হাজার শিক্ষার্থীর আবাসনের জন্য গড়ে তোলা হবে। সেখানে বর্তমান ক্যাম্পাস থেকে ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে সরিয়ে নেওয়া হবে। বর্তমান ক্যাম্পাসে আবাসন সংকট থাকলেও ওই ক্যাম্পাস হবে শতভাগ আবাসিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন একটি ক্যাম্পাস। সেখানে ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন, বিনোদন এবং চিকিৎসাসহ সব ব্যবস্থাই থাকবে।
উল্লেখ্য, ১৯৬১ সালে আরও একবার দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জানান, আবাসন সমস্যার সমাধানকল্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়াউর রহমান হল ও মাস্টারদা সূর্যসেন হলের মধ্যবর্তী স্থানে এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট একটি নতুন হল নির্মাণের কাজ চলছে। ছাত্রীদের আবাসন সংকট নিরসনের লক্ষ্যে ফজলুল হক হলের সামনে টুইন হল নামে ছাত্রীদের জন্য এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট আরেকটি হলের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এছাড়া সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সামনে এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট আরেকটি ছাত্রী হল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন