রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০১১

শত কোটি টাকার পুরনো বগি !

শত কোটি টাকার পুরনো বগি!

শনিবার, ১৬ জুলাই ২০১১
লিংকন মাহমুদ
 রেলের জন্য শত কোটি টাকার পুরনো বগি আনা হচ্ছে। ভারতের রেল বিভাগে অযোগ্য ঘোষিত এসব বগি এদেশের জন্য আনছে ওই দেশেরই কোম্পানি ট্যাক্সমাকো লিমিটেড। পুরনো বগিগুলো মেরামত ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজকর্ম সেরে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রেলের বগিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল এখন ভারত সফরে রয়েছে। তাই আগামী মাসের কোন এক সময় বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য পুরনো ১৬৫টি বিজি বগি ট্যাংক ওয়াগন, ছয়টি বিজি বগি ব্রেক ভ্যান ও ক্যাপিটাল যন্ত্রপাতি আসবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জ্বালানি সরবরাহের নামে তড়িঘড়ি করে পুরনো ট্যাংক ওয়াগন আনার কোন মানে হয় না। এর ফলে রেল বিভাগে আরও দুরবস্থা তৈরি হবে। তেল পরিবহনে সমস্যা কাটানোর বদলে ঝামেলা আরও বাড়বে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে বারবার টেলিফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। আর রেলপথ বিভাগের সচিব বাইরে থাকায় তাকে পাওয়া যায়নি। রেলপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রেলের এসব যন্ত্রপাতি আনার জন্য কার্যাদেশ প্রদান শেষে সবেমাত্র চুক্তি হয়েছে। এখন এসব যন্ত্রপাতি তৈরি করতে কম করে হলেও ছয় থেকে সাত মাস সময় ব্যয় হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ট্যাক্সমাকোর স্থানীয় এজেন্ট জানিয়ে দিয়েছে, দুয়েক মাসের মধ্যে তারা বগিগুলো সরবরাহ করতে পারবে। রেলপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ১৮০টি বিজি বগি ট্যাংক ওয়াগন, ছয়টি বিজি বগি ব্রেক ভ্যান ও ক্যাপিটাল বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনার জন্য গত বছরের ২৫শে অক্টোবর দরপত্র আহ্বান করে বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজশাহী অঞ্চল। এতে ভারতীয় কোম্পানি ট্যাক্সমাকো লিমিটেড, ব্রিজ অ্যান্ড রুফ কোম্পানি লিমিটেড, এমটেক রেল কার ইন্ডাস্ট্রিজ (প্রা.) লিমিটেড, জাগুয়ার ওভারসিজ লিমিটেড, হিন্দুস্তান ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এবং বেসকো লিমিটেড দরপত্র দলিল কিনে। তবে দরপত্র দলিলে কঠিন শর্ত থাকায় ট্যাক্সমাকো ছাড়া অন্য পাঁচ ভারতীয় কোম্পানি খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। এজন্য গত ১৫ই ফেব্রুয়ারির তিনটি দরপত্রে অন্য কোন কোম্পানি অংশ নেয়নি। সবক’টি দরপত্র দলিলের শর্তে বলা ছিল, প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের রেলওয়ের ট্যাংক ওয়াগন সরবরাহে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এর বাইরে ৫০০০ ট্যাংক ওয়াগন সরবরাহের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এছাড়া বিদেশের কোন রেলওয়ে প্রতিষ্ঠানে শতাধিক ট্যাংক ওয়াগন সরবরাহের অভিজ্ঞতা থাকবে হবে। এমন কঠিন শর্তের কারণে ভারতের সেরা পাঁচটি কোম্পানি দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় রেলওয়েতে ট্যাংক ওয়াগন সরবরাহ করে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১২ টি। এসব কোম্পানির মধ্যে ট্যাক্সমাকোই শুধুমাত্র রেলওয়ের জুড়ে দেয়া শর্ত পূরণ করতে সক্ষম। ওদিকে দরপত্রের এমন কঠিন শর্তের মধ্যেও ট্যাক্সমাকোর সঙ্গে জাগুয়ার ওভারসিস লিমিটেড নামের ভারতীয় কোম্পানি অংশ নেয়। গেল বছরের ৬ই ডিসেম্বর দরপত্রে অংশ নেয়া জাগুয়ার ওভারসিস লিমিটেড ও ট্যাক্সমাকো লিমিটেডের টেকনিক্যাল অফার খোলা হয়। তবে কারিগরি মূল্যায়নে ট্যাক্সমাকো লিমিটেডের প্রস্তাবটি রেসপনসিভ ও জাগুয়ার ওভারসিস লিমিটেডের প্রস্তাবটি নন- রেসপনসিভ হিসেবে বিবেচনা করে রিপোর্ট দেয় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি)। দরপত্র মূল্যায়ন রিপোর্টে টিইসি কমিটি জানায়, জাগুয়ার ওভারসিস লিমিটেড নন-রেসপনসিভ বিবেচিত হওয়ার কারণ তারা মডার্ন ইন্ডাস্ট্রিজের প্রস্তুত করা ট্যাংক ওয়াগন সরবরাহের প্রস্তাব করেছে। প্রস্তুতকারকের অভিজ্ঞতার সনদ পর্যালোচনা করে টিইসি কমিটি দেখতে পায়, তারা ২০০০ সাল থেকে ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত ৯৭২টি ট্যাংক ওয়াগন সরবরাহ ও তৈরি করেছে। একই সঙ্গে ৩৫১টি ট্যাংক ওয়াগন সরবরাহের কার্যাদেশ তাদের হাতে রয়েছে। অর্থাৎ তাদের ১৫ বছরের বদলে ১০ বছর এবং ৫০০০ এর বদলে ৯৭২টি ট্যাংক ওয়াগন প্রস্তুত ও সরবরাহের অভিজ্ঞতা রয়েছে। একই সঙ্গে নন-রেসপনসিভ কোম্পানিটি বিদেশী কোন রেলওয়ে প্রতিষ্ঠানে ট্যাংক ওয়াগন সরবরাহের কোন প্রমাণ দিতে পারেনি। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দরপত্রের ডিপিপিকে পাশ কাটিয়েও যন্ত্রপাতি কিনছে রেলপথ বিভাগ। কারণ প্রকল্পের ডিপিপিতে ১৮০টি ট্যাংক ওয়াগন কেনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে রেসপনসিভ দরদাতা যন্ত্রপাতির মোট মূল্য বাবদ ১৩৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩৫২০০ টাকা উল্লেখ করেছে। এর বিপরীতে ডিপিপিতে সংস্থান ছিল ১১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এজন্য ১৮০টি ট্যাংক ওয়াগনের বদলে ১৬৫টি এবং অন্যান্য ক্যাটাগরির পণ্য কিছু কমিয়ে ১২০ কোটি ৯০ লাখ ৯৭০৫০ টাকা নির্ধারণ করার সুপারিশ করে টিইসি। এমন নানা কাহিনীর জন্ম দিয়ে গত মার্চে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে ট্যাক্সমাকোর প্রস্তাবটি অনুমোদন পায়। এরপর দ্রুতগতিতে কার্যাদেশ দেয়া হয়। এ মাসের প্রথম দিকে মালামাল সরবরাহের জন্য চুক্তিও হয়। তবে এখন রেল ভবনে বলাবলি হচ্ছে, নতুন নয় পুরনো মালামালই সরবরাহ করতে যাচ্ছে তারা। এজন্য সরকারের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে তাদের সমঝোতাও হয়েছে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন