শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা
নিবারণ বড়ুয়া
বহুল আলোচিত জাতীয় শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ এর জন্য এখনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে শিক্ষানীতির আলোকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক এবং দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মাধ্যমিক স্তর নির্ধারণ করায় শিক্ষকদের পদমর্যাদা ও বেতন স্কেল নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে। প্রায় ২৬ হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক কোনোভাবেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে রাজি নন। আবার কলেজের শিক্ষকরা চান না স্কুলশিক্ষকে পরিণত হতে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠদানকারী কলেজশিক্ষকরাও প্রভাষক পদ হারাতে রাজি নন। সূত্রমতে, উচ্চমাধ্যমিক স্তরে অনেক কলেজের অস্তিত্বও এখন হুমকির মুখে। দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানকারী কলেজ প্রধানদের পদবি অধ্যক্ষ। নতুন শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হলে তারা প্রধান শিক্ষক হিসেবে অভিহিত হবেন। এটা তারা মেনে নিতে পারছেন না। কেননা অধ্যক্ষ আর প্রধান শিক্ষকের পদমর্যাদা ও বেতন স্কেল এক নয়। একইভাবে প্রভাষক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকের বেতন স্কেলও এক নয়। জানা গেছে, বর্তমানে সারা দেশে আট হাজার 'ইন্টারমিডিয়েট কলেজ' রয়েছে। এর অধ্যক্ষদের বেতন স্কেল ২২ হাজার ৫০০ টাকা। দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মাধ্যমিক স্তর হয়ে গেলে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে ১৫ হাজার টাকার স্কেলে বেতন নিতে হবে। একইভাবে প্রভাষকরা ১১ হাজার টাকার স্কেল থেকে স্কুলশিক্ষকের ছয় হাজার ৮০০ টাকার স্কেলে নেমে আসবেন। এ অবস্থায় শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হলে শিক্ষকদের পদমর্যাদা ও বেতনভাতা কীভাবে নিরূপিত হবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অবশ্য এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট তিনটি অধিদফতরে এখন ঘনঘন সভা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষানীতি নিয়ে অনুষ্ঠিত সভা থেকে তিন অধিদফতরকেই প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কারিগরি শিক্ষার ওপর আলাদা প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। শিক্ষক সংগঠনের নেতারা বলেছেন, পদমর্যাদা ও বেতন স্কেল ঢেলে সাজালেই শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। এতে শিক্ষকরাও খুশি হবেন। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, হঠাৎ করে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা স্তরে শিক্ষকদের পদমর্যাদা ও বেতন কাঠামো পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবে সরকার শিক্ষকদের পৃথক বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'সবাইকে সম্পৃক্ত করে শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কোনোভাবেই শিক্ষকদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করা হবে না। তাদের মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে সরকার আন্তরিক।' প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ৮ এপ্রিল শিক্ষানীতি প্রণয়নে জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ওই বছরেই সেপ্টেম্বর মাসে তাদের সুপারিশ জমা দেয়। গত বছর মে মাসে মন্ত্রিসভায় জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুমোদন পায়। পরে সেটি জাতীয় সংসদেও গৃহীত হয়। তবে বিরোধী দল ও সমমনা ধর্মভিত্তিক দলগুলো তখন এর বিরোধিতা করে। অবশ্য দেশের অনেক শিক্ষাবিদই শিক্ষানীতিকে স্বাগত জানিয়ে দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন