ছোট হয়ে আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিধি
লেখক: সাইদুর রহমান । শনি, ৮ অক্টোবর ২০১১, ২৩ আশ্বিন ১৪১৮
৬৪০ একরের মধ্যে ৪শ’ একর জমিই হাতছাড়া
গাছপালা কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন নতুন ভবন
কমছে খোলা জায়গা, বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে ক্যাম্পাস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিধি ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। ভয়াবহ জমি সংকটে পড়েছে দেশের গৌরবোজ্জ্বল এই বিদ্যায়তনটি। ১৯২১ সালে ৬৪০ একর জমি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হলেও বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৪শ’ একর জমি হাতছাড়া হয়েছে। অবশিষ্ট জায়গার কিছু অংশ লিজ দেয়ার পাশাপাশি বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণ করে ক্যাম্পাসের পরিবেশ ঘিঞ্জি করে তোলা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, কর্তৃপরে অবহেলা, রাজনৈতিক হস্তপে ও সরকারি অধিগ্রহণের কারণে বেদখল হয়েছে এ জমি। বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারের ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, কতটুকু জমি বেদখল হয়েছে তার হিসাব চলছে। অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি উদ্ধার করা হবে। জিসিদেবের বাড়ি ও গ্রীনরোড এলাকার কিছু জমি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এ জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। সরকারের হস্তেেপ জমি সংকটের সমাধান হতে পারে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ক্রমশ ছাত্র-শিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং শিার পরিধি বিস্তারের ফলে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। শিার্থীর সংখ্যা অনুপাতে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে যে জমিটুকু দরকার তার জন্য কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠ, কখনো বা খোলা জায়গায় ভবন নির্মাণ করে ক্যাম্পাসের মূল নকশা তছনছ করে ফেলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পাশে অডিটরিয়াম নির্মাণের জন্য প্রায় অর্ধশত গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এর আগে লাইব্রেরির সামনে ফারসি স্টাডিজ সেন্টারের ভবন নির্মাণের জন্য অনেক গাছ কাটা হয়। মধুর ক্যান্টিনের পাশে বেশ কিছু গাছ কেটে বহুতল বিশিষ্ট সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভবন নিমার্ণ কাজ চলছে। জগন্নাথ হলের পাশেও গাছ কেটে বর্ধিত ভবন নিমার্ণের কাজ করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে এখন যে পরিমাণ গাছ রয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদে ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে এবং জমি সংকটের কারণে এ গাছগুলোও বিভিন্ন সময় কেটে ফেলা হচ্ছে। ফলে দিন দিন ক্যাম্পাস তার বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে। হয়ে উঠছে ঘিঞ্জি। এখনো পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির ব্যাপারে প্রশাসন বাস্তবসম্মত কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বরং প্রশাসন ক্যাম্পাস থেকে অনেকটা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
কর্তৃপরে মতে, ১২টি বিভাগে ৮৭৭ জন ছাত্র এবং ৬০ জন শিক নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হয়েছিল। ৯১ বছরে পা রাখা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক আছেন প্রায় ১৬শ’, ছাত্র-ছাত্রী প্রায় ৩২ হাজার। তাছাড়া বিভাগ ৬৯টি, ইনস্টিটিউট ৯টি, ১৩টি অনুষদ, ব্যুরো ও গবেষণা কেন্দ ৩৭টি এবং ১৭টি আবাসিক হল রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিস থেকে জানানো হয়েছে, গত ৯০ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩৭ গুণ এবং শিকের সংখ্যা ২৫ গুণ বেড়েছে। কিন্তু কমে গেছে জমির পরিমাণ। বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়টির মোট জমির পরিমাণ ২৪০ একর। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে জায়গা রয়েছে তার মধ্যে ব্রিটিশ কাউন্সিল, আনবিক শক্তি কমিশন ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজকে লিজ দেয়া হয়েছে।
যেভাবে বেদখল হয় জমি ঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নথিপত্র থেকে জানা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্কালীন মূল ভবনের দুই-তৃতীয়াংশ রিকুইজিশন করে সামরিক হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। যুদ্ধের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ভবনটিই হাতছাড়া হয়ে যায়। বর্তমানে সেখানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশ ভাগের পর সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশস্ত প্রশাসনিক ভবন দখল করে সেখানে হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠা করে। ফজলুল হক হলের দেিণ খেলার মাঠও নিয়ে নেয়া হয় রেলওয়ে সমপ্রসারণের জন্য। ¯^াধীনতার পরও দফায় দফায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি বেহাত হয়েছে। গ্রীন রোড এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ বিঘা জমির ১২ বিঘাই বেদখল হয়ে গেছে। বর্তমান মিন্টো রোড এবং হেয়ার রোডের বাংলোগুলো ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে, যেগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিকরা বসবাস করতেন।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর থেকেই জমি সংকট প্রকট হতে থাকে। বিশেষ করে একটি প্রাদেশিক রাজধানীর জন্য প্রয়োজনীয় সরকারি অফিস-আদালত স্থাপনের জন্য জায়গার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এ জন্য সেক্রেটারিয়েট বা সচিবালয় স্থাপনের জন্য নেয়া হয় ইডেন কলেজের ভবনগুলো, হাইকোর্টের জন্য গভর্নর হাউজ এবং প্রাদেশিক আইন সভার জন্য জগন্নাথ হলের কেন্দ্রীয় ভবন। জগন্নাথ হাউস সরকার জবরদখল করে নেয়ায় তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন স্থানান্তরিত হয় জগন্নাথ হলের দণি ভবনে (বর্তমান দণি বাড়ি)। তখনই (১৯৪৭ সালে) ঢাকায় মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভবন (তত্কালীন কলা ভবন, বর্তমান ঢাকা মেডিক্যাল) পুরোপুরি হাতছাড়া হয়ে যায়। বর্তমান বুয়েট, আলিয়া মাদ্রাসা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রূপসী বাংলা হোটেল, শিশুপার্কের কিছু অংশ, বদরুন্নেসা কলেজের জন্যও আরও কিছু জমি বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাড়তে হয়। এছাড়া শিা ভবনের পূর্বদিকের জমিটিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছিল,যা সরকার দখল করে নেয়।
প্রতিষ্ঠার পর জমি রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি ঃ কর্তৃপরে সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি রেজিস্ট্রি করা হয়নি। তবে ১৯২৭ সালে গঠিত সেডলার কমিশন ২৫৭ একর জমি বিশ্ববিদ্যালয়কে রেজিস্ট্রি করে দেয়ার সুপারিশ করে। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্কালীন উপাচার্য ডঃ এ এফ রহমান এবং সেক্রেটারি অফ স্টেট ফর ইন্ডিয়া ইন কাউন্সিল এম এম স্টুয়ার্টের মধ্যে একটি দলিল ¯^ারিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ লাখ ১৭ হাজার ৮৮০ বর্গফুট ফোর স্পেস সংবলিত ভবনাদিসহ ২৫৭ একর ৭০ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয়। ওই দলিল ¯^ারের ফলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি বেহাত হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়। প্রায় ৬শ’ ৪০ একর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি কমে আসে ২৫৭ একরে। তবে ১৯৪৭ সালের পর অনুষ্ঠিত প্রতিটি সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি দাবি করা হত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ক্রমাগত দাবি ও চাপের মুখে ১৯৫০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের জন্য গঠিত হয় বিচারপতি ফজলে আকবর কমিশন।
কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়, ২৫৭ একর জমি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অপ্রতুল। কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো ৬৩ একর জমি দেয়ার সুপারিশ করে। কিন্তু তা দেয়া হয়নি বরং পাকিস্তান আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও জমি সরকার অধিগ্রহণ করে নেয়। ১৯৬১ সালে সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজধানীর বাইরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তখন টঙ্গির ফৈজাবাদ, পুরাকর ও দণিখানে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ১ হাজার একর জমি একুইজিশন করা হয়। এ জমির মূল্য তখন ধার্য করা হয়েছিল ৩২ লাখ টাকা, যার মধ্যে ২০ লাখ টাকাই পরিশোধ করা হয়েছিল।
জিসি দেবের জমিতে হাক্কানী খানকায়ে শরীফ ঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের কর্মকর্তা ফাতেমা বিনতে মুস্তফা বলেন, ধানমন্ডির জাপান-বাংলাদেশ ফেন্ডশিপ হাসপাতালের পার্শ্বে সাড়ে ৭ কাঠা জমি বিশিষ্ট দার্শনিক জিসি দেব মৃত্যুর আগে ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করেন। তবে পরবর্তীকালে জিসি দেবের পালিত এক কন্যা এই জমি হাক্কানী খানকায়ে শরীফের কাছে ভাড়া দেন। ১৯৭৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প থেকে জমি ফেরত চেয়ে হাক্কানী খানকায়ে শরীফকে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু তারা জমি ফেরত দেয়নি। বরং প্রতিষ্ঠানটি জিসি দেবের পুরো জমি দখলে নেয়। পরে জমি ফেরত চেয়ে ১৯৮০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় আদালতের দ্বারস্থ হয়। আজও সে মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। তবে হাক্কানী খানকাহ শরীফের সংশ্লিষ্ট একজন জানান, জমিটি জিসিদেবের কন্যার কাছ থেকে ক্রয় করা হয়।
জমি ফিরিয়ে নিতে কয়েক দফা উদ্যোগ ঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিস সূত্র জানায়, ১৯৩৬ সাল থেকে হুকুম দখল করা জমি ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ সরকারের কাছে দেন দরবার শুরু করে। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে যথারিতি এ কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। এরশাদ সরকারের পতনের পর গণতান্ত্রিক সরকারের আমলের প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ ১৯৯২ সালের জুলাই মাসে হুকুম দখল করা জমি সরকারের কাছে ফেরত দাবি করেন। তবে এর আগে ১৯৯০ সালের মার্চ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্কালীন উপাচার্য অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা জমি পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেন। তিনি ইত্তেফাককে জানান, উপাচার্য হিসেবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি ফিরিয়ে আনার জন্য ১৯৯০ সালের ২০ আগস্ট তত্কালীন রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন। ঐ আবেদনে তিনি কাঁটাবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমিতে নির্মিত দোকান-পাটসহ জমি, নিমতলীতে অবস্থিত পুুুুুুরানো জাদুঘর ও ভবনাদি, বুয়েটের কিছু এলাকা, ফজলুল হক হলের পূর্ব পাশে অবস্থিত রেলওয়ে অধিকৃত জমি ও টঙ্গিতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থানান্তরের জন্য যে জমি অধিগ্রহণের কথা ছিল-তা বিশ্ববিদ্যালয়কে ফেরত দেয়ার দাবি জানান। এ আবেদনের পরিপ্রেেিত কাঁটাবনের জমি ও দোকান-পাট সংক্রান্ত কাগজ-পত্র বিশ্ববিদ্যালয়কে হস্তান্তর করা হয়। নিমতলী যাদুঘর এলাকা ও ভবন প্রাপ্তির চেষ্টাও ফলপ্রসূ হয়। এ বিষয়ে ১৯৯০ সালের অক্টোবর বা নভে¤^র মাসে রাষ্ট্রপতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্তক্রমে জাদুঘর ভবনসহ ঐ এলাকা বিশ্ববিদ্যালয় দখলে নেয় ডিসে¤^রের প্রথম দিকে।
পরের উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদও বিশ্ববিদ্যালয়ের দখল হওয়া জমি ফেরত পাওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি এক পত্রে সরকারের দখলে রাখা জমি এবং বিচারপতি ফজলে আকবর কমিশনের সুপারিশকৃত ৬৩ একর জমিসহ মোট ২১০ একর জমি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয়ার দাবি জানান। তিনি নীলেেত অবস্থিত বর্তমান নিউমার্কেট থানার ২ একর ৬৮ শতাংশের খাস জমি, কার্জন হলের পূর্বদিকে ওসমানী উদ্যান ও ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন বাদে রেলওয়ের ২৪ একর ৩৯ শতাংশ জমি, আনন্দবাজারের ৭ একর ২৩ শতাংশ জমি এবং কর্মজীবী হাসপাতালের পূর্বদিকের ৩ একর ১৯ শতাংশ জমি ফেরত চান। বাকি জমি তিনি ১৯৬১ সালে টঙ্গিতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থানান্তরের যে জায়গা নির্ধারিত হয়েছিল সেখানে দাবি করেন। একইভাবে পূর্বের উপাচার্যদের মতো অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরীও ১৯৯৭ ও ১৯৯৯ সালে মোট দুইবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বেদখল হওয়া জমি দাবি করে সরকারকে চিঠি দিয়েছিলেন। তিনি বেদখল হওয়া জমি চিহ্নিত করে তা উদ্ধারের জন্য তত্পর হন। এছাড়াও পরবর্তী উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ জমি ফেরত চেয়ে সরকারকে পত্র দেন। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকও জমি উদ্ধারের ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি এ বিষয়ে দ্রুত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে।
দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার ¯^প্ন ভেস্তে গেল ঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ক্যাম্পাসের পরিবেশে ঘিঞ্জি হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন মহল থেকে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার দাবি তোলা হয়। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনেকটা নীতিগতভাবে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের জন্য সম্মত হয়। তত্কালীন প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আফম ইউসুফ হায়দারকে প্রধান করে একটি মাস্টারপ্লান কমিটিও করা হয়। এ জন্য রাজধানীর পূর্বাচলকে বেছে নেয়া হয়। কিন্তু জায়গা সংকটের কারণে পূর্বাচলের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের ¯^প্ন ভেস্তে যায়। তবে শান্ত্বনা¯^রূপ এখনো দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের বিকল্প হিসেবে আশুলিয়া ও সোনারগাঁ এলাকাকে ভাবা হচ্ছে। পূর্বাচলে প্রস্তাবিত দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে ২০ হাজার শিার্থীর আবাসন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার ইত্তেফাককে বলেন, বিগত সময়ে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিল। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকও করা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠায় বর্তমান প্রশাসনের অনীহার চিত্র ধরা পড়ে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ সময়ের দাবি। বিগত সময়ে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল কিন্তু সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে তিনি বলেন, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ¯^ জমি উদ্ধার করা হবে।
লেখক: সাইদুর রহমান । শনি, ৮ অক্টোবর ২০১১, ২৩ আশ্বিন ১৪১৮
৬৪০ একরের মধ্যে ৪শ’ একর জমিই হাতছাড়া
গাছপালা কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন নতুন ভবন
কমছে খোলা জায়গা, বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে ক্যাম্পাস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিধি ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। ভয়াবহ জমি সংকটে পড়েছে দেশের গৌরবোজ্জ্বল এই বিদ্যায়তনটি। ১৯২১ সালে ৬৪০ একর জমি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হলেও বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৪শ’ একর জমি হাতছাড়া হয়েছে। অবশিষ্ট জায়গার কিছু অংশ লিজ দেয়ার পাশাপাশি বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণ করে ক্যাম্পাসের পরিবেশ ঘিঞ্জি করে তোলা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, কর্তৃপরে অবহেলা, রাজনৈতিক হস্তপে ও সরকারি অধিগ্রহণের কারণে বেদখল হয়েছে এ জমি। বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারের ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, কতটুকু জমি বেদখল হয়েছে তার হিসাব চলছে। অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি উদ্ধার করা হবে। জিসিদেবের বাড়ি ও গ্রীনরোড এলাকার কিছু জমি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এ জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। সরকারের হস্তেেপ জমি সংকটের সমাধান হতে পারে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ক্রমশ ছাত্র-শিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং শিার পরিধি বিস্তারের ফলে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। শিার্থীর সংখ্যা অনুপাতে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে যে জমিটুকু দরকার তার জন্য কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠ, কখনো বা খোলা জায়গায় ভবন নির্মাণ করে ক্যাম্পাসের মূল নকশা তছনছ করে ফেলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পাশে অডিটরিয়াম নির্মাণের জন্য প্রায় অর্ধশত গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এর আগে লাইব্রেরির সামনে ফারসি স্টাডিজ সেন্টারের ভবন নির্মাণের জন্য অনেক গাছ কাটা হয়। মধুর ক্যান্টিনের পাশে বেশ কিছু গাছ কেটে বহুতল বিশিষ্ট সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভবন নিমার্ণ কাজ চলছে। জগন্নাথ হলের পাশেও গাছ কেটে বর্ধিত ভবন নিমার্ণের কাজ করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে এখন যে পরিমাণ গাছ রয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদে ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে এবং জমি সংকটের কারণে এ গাছগুলোও বিভিন্ন সময় কেটে ফেলা হচ্ছে। ফলে দিন দিন ক্যাম্পাস তার বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে। হয়ে উঠছে ঘিঞ্জি। এখনো পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির ব্যাপারে প্রশাসন বাস্তবসম্মত কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বরং প্রশাসন ক্যাম্পাস থেকে অনেকটা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
কর্তৃপরে মতে, ১২টি বিভাগে ৮৭৭ জন ছাত্র এবং ৬০ জন শিক নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হয়েছিল। ৯১ বছরে পা রাখা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক আছেন প্রায় ১৬শ’, ছাত্র-ছাত্রী প্রায় ৩২ হাজার। তাছাড়া বিভাগ ৬৯টি, ইনস্টিটিউট ৯টি, ১৩টি অনুষদ, ব্যুরো ও গবেষণা কেন্দ ৩৭টি এবং ১৭টি আবাসিক হল রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিস থেকে জানানো হয়েছে, গত ৯০ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩৭ গুণ এবং শিকের সংখ্যা ২৫ গুণ বেড়েছে। কিন্তু কমে গেছে জমির পরিমাণ। বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়টির মোট জমির পরিমাণ ২৪০ একর। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে জায়গা রয়েছে তার মধ্যে ব্রিটিশ কাউন্সিল, আনবিক শক্তি কমিশন ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজকে লিজ দেয়া হয়েছে।
যেভাবে বেদখল হয় জমি ঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নথিপত্র থেকে জানা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্কালীন মূল ভবনের দুই-তৃতীয়াংশ রিকুইজিশন করে সামরিক হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। যুদ্ধের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ভবনটিই হাতছাড়া হয়ে যায়। বর্তমানে সেখানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশ ভাগের পর সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশস্ত প্রশাসনিক ভবন দখল করে সেখানে হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠা করে। ফজলুল হক হলের দেিণ খেলার মাঠও নিয়ে নেয়া হয় রেলওয়ে সমপ্রসারণের জন্য। ¯^াধীনতার পরও দফায় দফায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি বেহাত হয়েছে। গ্রীন রোড এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ বিঘা জমির ১২ বিঘাই বেদখল হয়ে গেছে। বর্তমান মিন্টো রোড এবং হেয়ার রোডের বাংলোগুলো ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে, যেগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিকরা বসবাস করতেন।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর থেকেই জমি সংকট প্রকট হতে থাকে। বিশেষ করে একটি প্রাদেশিক রাজধানীর জন্য প্রয়োজনীয় সরকারি অফিস-আদালত স্থাপনের জন্য জায়গার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এ জন্য সেক্রেটারিয়েট বা সচিবালয় স্থাপনের জন্য নেয়া হয় ইডেন কলেজের ভবনগুলো, হাইকোর্টের জন্য গভর্নর হাউজ এবং প্রাদেশিক আইন সভার জন্য জগন্নাথ হলের কেন্দ্রীয় ভবন। জগন্নাথ হাউস সরকার জবরদখল করে নেয়ায় তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন স্থানান্তরিত হয় জগন্নাথ হলের দণি ভবনে (বর্তমান দণি বাড়ি)। তখনই (১৯৪৭ সালে) ঢাকায় মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভবন (তত্কালীন কলা ভবন, বর্তমান ঢাকা মেডিক্যাল) পুরোপুরি হাতছাড়া হয়ে যায়। বর্তমান বুয়েট, আলিয়া মাদ্রাসা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রূপসী বাংলা হোটেল, শিশুপার্কের কিছু অংশ, বদরুন্নেসা কলেজের জন্যও আরও কিছু জমি বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাড়তে হয়। এছাড়া শিা ভবনের পূর্বদিকের জমিটিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছিল,যা সরকার দখল করে নেয়।
প্রতিষ্ঠার পর জমি রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি ঃ কর্তৃপরে সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি রেজিস্ট্রি করা হয়নি। তবে ১৯২৭ সালে গঠিত সেডলার কমিশন ২৫৭ একর জমি বিশ্ববিদ্যালয়কে রেজিস্ট্রি করে দেয়ার সুপারিশ করে। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্কালীন উপাচার্য ডঃ এ এফ রহমান এবং সেক্রেটারি অফ স্টেট ফর ইন্ডিয়া ইন কাউন্সিল এম এম স্টুয়ার্টের মধ্যে একটি দলিল ¯^ারিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ লাখ ১৭ হাজার ৮৮০ বর্গফুট ফোর স্পেস সংবলিত ভবনাদিসহ ২৫৭ একর ৭০ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয়। ওই দলিল ¯^ারের ফলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি বেহাত হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়। প্রায় ৬শ’ ৪০ একর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি কমে আসে ২৫৭ একরে। তবে ১৯৪৭ সালের পর অনুষ্ঠিত প্রতিটি সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি দাবি করা হত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ক্রমাগত দাবি ও চাপের মুখে ১৯৫০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের জন্য গঠিত হয় বিচারপতি ফজলে আকবর কমিশন।
কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়, ২৫৭ একর জমি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অপ্রতুল। কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো ৬৩ একর জমি দেয়ার সুপারিশ করে। কিন্তু তা দেয়া হয়নি বরং পাকিস্তান আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও জমি সরকার অধিগ্রহণ করে নেয়। ১৯৬১ সালে সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজধানীর বাইরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তখন টঙ্গির ফৈজাবাদ, পুরাকর ও দণিখানে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ১ হাজার একর জমি একুইজিশন করা হয়। এ জমির মূল্য তখন ধার্য করা হয়েছিল ৩২ লাখ টাকা, যার মধ্যে ২০ লাখ টাকাই পরিশোধ করা হয়েছিল।
জিসি দেবের জমিতে হাক্কানী খানকায়ে শরীফ ঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের কর্মকর্তা ফাতেমা বিনতে মুস্তফা বলেন, ধানমন্ডির জাপান-বাংলাদেশ ফেন্ডশিপ হাসপাতালের পার্শ্বে সাড়ে ৭ কাঠা জমি বিশিষ্ট দার্শনিক জিসি দেব মৃত্যুর আগে ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করেন। তবে পরবর্তীকালে জিসি দেবের পালিত এক কন্যা এই জমি হাক্কানী খানকায়ে শরীফের কাছে ভাড়া দেন। ১৯৭৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প থেকে জমি ফেরত চেয়ে হাক্কানী খানকায়ে শরীফকে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু তারা জমি ফেরত দেয়নি। বরং প্রতিষ্ঠানটি জিসি দেবের পুরো জমি দখলে নেয়। পরে জমি ফেরত চেয়ে ১৯৮০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় আদালতের দ্বারস্থ হয়। আজও সে মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। তবে হাক্কানী খানকাহ শরীফের সংশ্লিষ্ট একজন জানান, জমিটি জিসিদেবের কন্যার কাছ থেকে ক্রয় করা হয়।
জমি ফিরিয়ে নিতে কয়েক দফা উদ্যোগ ঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিস সূত্র জানায়, ১৯৩৬ সাল থেকে হুকুম দখল করা জমি ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ সরকারের কাছে দেন দরবার শুরু করে। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে যথারিতি এ কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। এরশাদ সরকারের পতনের পর গণতান্ত্রিক সরকারের আমলের প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ ১৯৯২ সালের জুলাই মাসে হুকুম দখল করা জমি সরকারের কাছে ফেরত দাবি করেন। তবে এর আগে ১৯৯০ সালের মার্চ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্কালীন উপাচার্য অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা জমি পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেন। তিনি ইত্তেফাককে জানান, উপাচার্য হিসেবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি ফিরিয়ে আনার জন্য ১৯৯০ সালের ২০ আগস্ট তত্কালীন রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন। ঐ আবেদনে তিনি কাঁটাবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমিতে নির্মিত দোকান-পাটসহ জমি, নিমতলীতে অবস্থিত পুুুুুুরানো জাদুঘর ও ভবনাদি, বুয়েটের কিছু এলাকা, ফজলুল হক হলের পূর্ব পাশে অবস্থিত রেলওয়ে অধিকৃত জমি ও টঙ্গিতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থানান্তরের জন্য যে জমি অধিগ্রহণের কথা ছিল-তা বিশ্ববিদ্যালয়কে ফেরত দেয়ার দাবি জানান। এ আবেদনের পরিপ্রেেিত কাঁটাবনের জমি ও দোকান-পাট সংক্রান্ত কাগজ-পত্র বিশ্ববিদ্যালয়কে হস্তান্তর করা হয়। নিমতলী যাদুঘর এলাকা ও ভবন প্রাপ্তির চেষ্টাও ফলপ্রসূ হয়। এ বিষয়ে ১৯৯০ সালের অক্টোবর বা নভে¤^র মাসে রাষ্ট্রপতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্তক্রমে জাদুঘর ভবনসহ ঐ এলাকা বিশ্ববিদ্যালয় দখলে নেয় ডিসে¤^রের প্রথম দিকে।
পরের উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদও বিশ্ববিদ্যালয়ের দখল হওয়া জমি ফেরত পাওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি এক পত্রে সরকারের দখলে রাখা জমি এবং বিচারপতি ফজলে আকবর কমিশনের সুপারিশকৃত ৬৩ একর জমিসহ মোট ২১০ একর জমি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয়ার দাবি জানান। তিনি নীলেেত অবস্থিত বর্তমান নিউমার্কেট থানার ২ একর ৬৮ শতাংশের খাস জমি, কার্জন হলের পূর্বদিকে ওসমানী উদ্যান ও ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন বাদে রেলওয়ের ২৪ একর ৩৯ শতাংশ জমি, আনন্দবাজারের ৭ একর ২৩ শতাংশ জমি এবং কর্মজীবী হাসপাতালের পূর্বদিকের ৩ একর ১৯ শতাংশ জমি ফেরত চান। বাকি জমি তিনি ১৯৬১ সালে টঙ্গিতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থানান্তরের যে জায়গা নির্ধারিত হয়েছিল সেখানে দাবি করেন। একইভাবে পূর্বের উপাচার্যদের মতো অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরীও ১৯৯৭ ও ১৯৯৯ সালে মোট দুইবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বেদখল হওয়া জমি দাবি করে সরকারকে চিঠি দিয়েছিলেন। তিনি বেদখল হওয়া জমি চিহ্নিত করে তা উদ্ধারের জন্য তত্পর হন। এছাড়াও পরবর্তী উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ জমি ফেরত চেয়ে সরকারকে পত্র দেন। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকও জমি উদ্ধারের ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি এ বিষয়ে দ্রুত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে।
দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার ¯^প্ন ভেস্তে গেল ঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ক্যাম্পাসের পরিবেশে ঘিঞ্জি হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন মহল থেকে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার দাবি তোলা হয়। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনেকটা নীতিগতভাবে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের জন্য সম্মত হয়। তত্কালীন প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আফম ইউসুফ হায়দারকে প্রধান করে একটি মাস্টারপ্লান কমিটিও করা হয়। এ জন্য রাজধানীর পূর্বাচলকে বেছে নেয়া হয়। কিন্তু জায়গা সংকটের কারণে পূর্বাচলের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের ¯^প্ন ভেস্তে যায়। তবে শান্ত্বনা¯^রূপ এখনো দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের বিকল্প হিসেবে আশুলিয়া ও সোনারগাঁ এলাকাকে ভাবা হচ্ছে। পূর্বাচলে প্রস্তাবিত দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে ২০ হাজার শিার্থীর আবাসন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার ইত্তেফাককে বলেন, বিগত সময়ে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিল। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকও করা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠায় বর্তমান প্রশাসনের অনীহার চিত্র ধরা পড়ে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ সময়ের দাবি। বিগত সময়ে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল কিন্তু সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে তিনি বলেন, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ¯^ জমি উদ্ধার করা হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন