ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরের
সামনে বসার জন্য জায়গা চাই
লিংকন মাহমুদ, ঢাবি প্রতিনিধি
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও একথাটি আজ আশায় গুঁড়েবালি। তবুও মানুষ বাঁচে আশা নিয়ে, স্বপ্ন নিয়ে। মানুষের এই স্বপ্ন আর আশার সফল বাস্তবায়ন ঘটে যখন মানুষ তার বহু কাঙ্খিত সেই লক্ষ্যে পৌছতে পারে। আশার ভেলায় ভাসতে ভাসতে মানুষ যখন তার সাফল্য আর স্বপ্নের তীরে পৌছে ঠিক তখনি রচিত হয় মানবজাতির অশেষ আর অসীম কল্যাণ। যাই হোক আমাদের ঢাবিকে কেন্দ্র করে যেমনি আছে হাজারো স্বপ্ন তেমনি আছে লক্ষ প্রাণের আশা-ভালোবাসা। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে এক সুদীর্ঘ, সুবিশাল আর গৌরবময় ইতিহাস। আর সেই ইতিহাসের এক বিরাট অংশ ধরে রেখেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, অপরাজেয় বাংলা, কলাভবন, টিএসসি, ঢাবি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী, রাজু ভাস্কর্য, হাকিম চত্বর ছাড়াও ডজনখানেক স্থান, স্থাপত্যকীর্তি। যেগুলো শুধু ইতিহাসের ধারকই নয় বরং সমগ্র বাংলাদেশের ও বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন তথা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সাহস, প্রেরণা। আর তাই এ ইতিহাসের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ইতিহাস জড়িত। ১৯২১ সালে ১ জুলাই অর্থাৎ জন্মলগ্ন থেকেই যত শিক্ষার্থী এখানে পড়াশুনা করে পাশ করে বের হয়েছেন সবার অম্লান আর অমলিন স্মৃতি বিজড়িত এই গ্রন্থাগার চত্বর। প্রতিদিন প্রতিক্ষণ প্রতিটি মুহুর্তেই হাজারো শিক্ষার্থীদের ভিড়ে পদচারণায় মুখরিত থাকে এই চত্বরটি। সেই সকাল থেকে রাত ১০/১২টা অবধি নব উদ্যমতার ছোঁয়ায় তারূণ্যের এক মহামহিমাময় উচ্ছ্বলতায় টগবগ করতে থাকে এই গ্রন্থাগার চত্বর। আর বাকি থাকে যেন কেবলি সময়ের প্রতিক্ষা। পুরো জাতি যে আজ তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। শিক্ষার্থীরা ক্লাস আর পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে ক্লান্তি আর একঘুঁয়েমি কাটাতে তাই আড্ডা জমায় এই গ্রন্থাগার চত্বরে। তারপর হারিয়ে যায় অজানা, অচেনা এক আড্ডাময়, প্রাণবন্ত জগতে। যে জগতে শুধু আড্ডা না বরং তারই সাথে সাথে চলে নানা শিক্ষামূলক বিষয়ের আলোচনা, দেশ জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার প্রেরণা আর সমাজকল্যাণমূলক নানা আয়োজন। এগুলো ছাড়াও এখানে চলে এরকম অনেক অনেক সৃষ্টিশীল ক্রিয়াকর্ম- নাটক, গান, কবিতা আর গল্প স্বল্প অল্প। আর তাইতো আমরা যারা ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী তারা আড্ডাকে শুধু আড্ডা বলতে নারাজ। কারণ আমরা জানি, আমরা বুঝি পড়াশুনার ফাঁকে আড্ডাটাও একটা মাধ্যম, বিনোদনের আর মানবিকতার বুননের এক শক্তিশালী হাতিয়ার। এই আড্ডাতেই জন্ম নেয় মহাপুরুষ মহাকাল, সৃষ্টিবলয়ের ঘুরপাক। এই আড্ডাতেই হাতে রেখে হাত বন্ধুপ্রাণের ছোঁয়ায় শক্তি পাই, সাহস জুগাই মনে প্রাণে, পাই সাফল্যের সন্ধান। আর এই আড্ডাতেই বন্ধু আড্ডা গান;প্রাণে বাজে তাই সাফল্যের কলতান।
আজ এটা দু:খের বিষয় হলেও সত্য যে হাজারো বন্ধন আর প্রাণের মিলনমেলা এই গ্রন্থাগার চত্বর তার নিজস্ব রূপ হারাচ্ছে দিনদিন। কর্তৃপক্ষের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত এবং পরিকল্পনা নষ্ট করে দিচ্ছে চত্বরের সৌন্দর্য। চত্বরের সামনে আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের সীমান্তে শিক্ষার্থীদের বসার জায়গায় ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষ দেয়াল তুলে গ্রিল দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সৃষ্টি হচ্ছে এক হজিবিজি আর হযবরল অবস্থা। হারিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের আড্ডা মুখরিত সেই গ্রন্থাগার চত্বর। প্রাণবন্ত আড্ডার স্থানগুলো থেকে বাদ পড়ে গেল একটি চত্বরের নাম। আর তাই শামীম তানভীরের মতো একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমিও বলতে চাই, এভাবে যদি ক্যাম্পাসকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের নামে দেয়ালে দেয়ালে বন্দি করে ফেলা হয়, শিক্ষার্থীরা নিশ্বাস ফেলবে কোথায়? কোথায় গিয়ে ফুরফুরে করবে মনটাকে?
আজ তাই হাজারো প্রাণের দাবি, শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে কর্তৃপক্ষ গ্রন্থাগারের সামনের অংশে পুরো দেয়াল না দিয়ে বসার উপযোগী দেয়াল দিতে হবে। আর সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্য তৈরী করতে পারে নতুন কোন ভাষ্কর্য। যেখানে থাকতে পারে আধুনিক বাংলাদেশের চিত্র। যার ওপর নির্মিত হতে পারে একটি স্বনির্ভর, সমৃদ্ধ ও উন্নত আধুনিক বাংলাদেশ; আমার প্রিয় স্বদেশ, পুণ্য মাতৃভূমি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন