ঢাবিতে আবাসন সঙ্কট চরমে, ছাত্রীদের দুর্ভোগই বেশি
লিংকন মাহমুদ, ঢাবি প্রতিনিধি
তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার বৈতরণী পেরিয়ে ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন যশোরের এক শিক্ষার্থী। হলে থাকার সুযোগ না পেয়ে মামার বাসা হয়ে এক পর্যায়ে সাময়িকভাবে হলেও বাড়িতেই ফিরে যেতে হয় তাকে। ভর্তির প্রায় এক বছর পর প্রথম বর্ষ সমাপনী পরীক্ষার ঠিক এক সপ্তাহ আগে রোকেয়া হলে একটি সিট পেয়েছেন তিনি।
ওপরের ঘটনাটি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ফাতেমা বেগম। তিনি নিজেই ওই শিক্ষার্থীর হলে সিট পাওয়ার ব্যাপারে সহায়তা করেছিলেন। কিন্তু এমন ভুক্তভোগী তো বহু। কত জনকে সাহায্য করবেন ফাতেমা বেগম?
আবাসন সঙ্কটের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদেরই সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়।
প্রায় ১০ হাজার ছাত্রীর জন্য হল মাত্র চারটি। প্রতিটি হলে আসনসংখ্যার দ্বিগুণ ছাত্রী থাকছে। মেয়েদের চারটি হলে আসন ৩ হাজারের কিছু বেশি।
পলাশী স্টাফ কোয়ার্টারে থাকেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবরিনা তাসনিম। হলে সিট না পেয়ে প্রথমে থাকতেন খালার বাসা সাভারে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সাবরিনা বলেন, "এত দূর থেকে এসে ক্লাস করা খুবই কষ্ট হয়ে দাঁড়াতো। তাই এক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ি। অনেকগুলো ক্লাস করতে না পারায় এক হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে হয়েছে। শেষে বাধ্য হয়ে স্টাফ কোয়ার্টারে সাবলেট থাকছি।"
সাবরিনা এখন কুয়েত মৈত্রী হলে সিটের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ছাত্রীদের সমস্যাই আসলে বেশি। তাদের পক্ষে যে কোনো জায়গায় থাকা সম্ভব না। আবার আমাদের সমাজে নিকট আত্মীয়রাও আরেকজনের মেয়েকে কাছে রাখতে অস্বস্তি বোধ করে।"
ভর্তির পর এক বছর পার হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সঙ্গে যুক্ত প্রথম বর্ষের ছাত্ররা সিট পায়নি। এদের অনেকে থাকেন হলের মসজিদে। সিট বরাদ্দের দাবিতে রোববার রাতে তারা হলের ভেতর মিছিলও করেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র রোকনুজ্জামান খসরু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "প্রথম সেমিস্টার থেকে আমি মসজিদে থাকি। ভর্তি হওয়ার এক বছর পার হয়ে গেলেও হল কর্তৃপক্ষ সিটের বরাদ্দ দেয়নি।"
এমন চিত্র প্রায় প্রতিটি হলেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখন প্রায় ৩৩ হাজার। ছাত্র-ছাত্রী মিলিয়ে ১৭টি হলে সিট সংখ্যা ১৫ হাজার ১২০। তবে বেশিরভাগ হলেই আসনের দ্বিগুণ শিক্ষার্থী থাকেন।
শিক্ষার্থী অনুপাতে হলে আসনসংখ্যার অপ্রতুলতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম।
সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমার হলে সিটসংখ্যা ১ হাজার ৫০ হলেও এর বাইরে আরও প্রায় সাড়ে চারশ' শিক্ষার্থী থাকছে।"
বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহফুজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ঢাবিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও সে তুলনায় হলের সংখ্যা বাড়ছে না। এক সেশনের শিক্ষার্থীরা বের না হতেই নতুন সেশনে ভর্তি শুরু হচ্ছে। ফলে আবাসন সঙ্কট দিন দিন চরম আকার ধারণ করছে।"
উপাচার্য অধ্যাপক ফায়েজ বলেন, "অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আবাসন সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় সবার আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আরও হল প্রয়োজন হলেও নতুন হল করার স্থান নেই বলে হতাশা প্রকাশ করে উপাচার্য বলেন, "আমরা এখন মোট এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারছি। সবাইকে আবাসন সুবিধা দেওয়া এখনও আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। নতুন ক্যাম্পাস করা ছাড়া এ সমস্যার সমাধানের পথও দেখছি না।"
আবাসন সঙ্কট সাময়িকভাবে নিরসনে অধ্যাপক ফায়েজ কিছু মতামতও দেন।
তিনি বলেন, "বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে ডরমিটরি থাকে। আবাসন সমস্যা কিছুটা হলেও সমাধানের জন্য পুরো একটি বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভাড়া নিতে পারে। প্রয়োজন হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার বিষয়ে সাহায্য করবে। এতে সাময়িকভাবে হলেও আবাসন সমস্যার সমাধান হবে।"
লিংকন মাহমুদ, ঢাবি প্রতিনিধি
তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার বৈতরণী পেরিয়ে ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন যশোরের এক শিক্ষার্থী। হলে থাকার সুযোগ না পেয়ে মামার বাসা হয়ে এক পর্যায়ে সাময়িকভাবে হলেও বাড়িতেই ফিরে যেতে হয় তাকে। ভর্তির প্রায় এক বছর পর প্রথম বর্ষ সমাপনী পরীক্ষার ঠিক এক সপ্তাহ আগে রোকেয়া হলে একটি সিট পেয়েছেন তিনি।
ওপরের ঘটনাটি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ফাতেমা বেগম। তিনি নিজেই ওই শিক্ষার্থীর হলে সিট পাওয়ার ব্যাপারে সহায়তা করেছিলেন। কিন্তু এমন ভুক্তভোগী তো বহু। কত জনকে সাহায্য করবেন ফাতেমা বেগম?
আবাসন সঙ্কটের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদেরই সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়।
প্রায় ১০ হাজার ছাত্রীর জন্য হল মাত্র চারটি। প্রতিটি হলে আসনসংখ্যার দ্বিগুণ ছাত্রী থাকছে। মেয়েদের চারটি হলে আসন ৩ হাজারের কিছু বেশি।
পলাশী স্টাফ কোয়ার্টারে থাকেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবরিনা তাসনিম। হলে সিট না পেয়ে প্রথমে থাকতেন খালার বাসা সাভারে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সাবরিনা বলেন, "এত দূর থেকে এসে ক্লাস করা খুবই কষ্ট হয়ে দাঁড়াতো। তাই এক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ি। অনেকগুলো ক্লাস করতে না পারায় এক হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে হয়েছে। শেষে বাধ্য হয়ে স্টাফ কোয়ার্টারে সাবলেট থাকছি।"
সাবরিনা এখন কুয়েত মৈত্রী হলে সিটের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ছাত্রীদের সমস্যাই আসলে বেশি। তাদের পক্ষে যে কোনো জায়গায় থাকা সম্ভব না। আবার আমাদের সমাজে নিকট আত্মীয়রাও আরেকজনের মেয়েকে কাছে রাখতে অস্বস্তি বোধ করে।"
ভর্তির পর এক বছর পার হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সঙ্গে যুক্ত প্রথম বর্ষের ছাত্ররা সিট পায়নি। এদের অনেকে থাকেন হলের মসজিদে। সিট বরাদ্দের দাবিতে রোববার রাতে তারা হলের ভেতর মিছিলও করেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র রোকনুজ্জামান খসরু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "প্রথম সেমিস্টার থেকে আমি মসজিদে থাকি। ভর্তি হওয়ার এক বছর পার হয়ে গেলেও হল কর্তৃপক্ষ সিটের বরাদ্দ দেয়নি।"
এমন চিত্র প্রায় প্রতিটি হলেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখন প্রায় ৩৩ হাজার। ছাত্র-ছাত্রী মিলিয়ে ১৭টি হলে সিট সংখ্যা ১৫ হাজার ১২০। তবে বেশিরভাগ হলেই আসনের দ্বিগুণ শিক্ষার্থী থাকেন।
শিক্ষার্থী অনুপাতে হলে আসনসংখ্যার অপ্রতুলতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম।
সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমার হলে সিটসংখ্যা ১ হাজার ৫০ হলেও এর বাইরে আরও প্রায় সাড়ে চারশ' শিক্ষার্থী থাকছে।"
বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহফুজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ঢাবিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও সে তুলনায় হলের সংখ্যা বাড়ছে না। এক সেশনের শিক্ষার্থীরা বের না হতেই নতুন সেশনে ভর্তি শুরু হচ্ছে। ফলে আবাসন সঙ্কট দিন দিন চরম আকার ধারণ করছে।"
উপাচার্য অধ্যাপক ফায়েজ বলেন, "অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আবাসন সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় সবার আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আরও হল প্রয়োজন হলেও নতুন হল করার স্থান নেই বলে হতাশা প্রকাশ করে উপাচার্য বলেন, "আমরা এখন মোট এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারছি। সবাইকে আবাসন সুবিধা দেওয়া এখনও আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। নতুন ক্যাম্পাস করা ছাড়া এ সমস্যার সমাধানের পথও দেখছি না।"
আবাসন সঙ্কট সাময়িকভাবে নিরসনে অধ্যাপক ফায়েজ কিছু মতামতও দেন।
তিনি বলেন, "বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে ডরমিটরি থাকে। আবাসন সমস্যা কিছুটা হলেও সমাধানের জন্য পুরো একটি বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভাড়া নিতে পারে। প্রয়োজন হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার বিষয়ে সাহায্য করবে। এতে সাময়িকভাবে হলেও আবাসন সমস্যার সমাধান হবে।"
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন