শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১১

জ্যেষ্ঠ শিক্ষক-সংকটে নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো




জ্যেষ্ঠ শিক্ষক-সংকটে নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

রিয়াদুল করিম | তারিখ: ১৪-১০-২০১১
অভিজ্ঞ ও দক্ষ শিক্ষকের অভাবে ভুগছে ঢাকার বাইরের নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা যায়, গত শিক্ষাবর্ষে ঢাকার বাইরে অন্তত তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অধ্যাপক ছিলেন না। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের সংখ্যা খুবই কম।
উচ্চশিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদের অভিজ্ঞ শিক্ষক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অভিজ্ঞ শিক্ষক ছাড়া উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন বা মান ধরে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু পদ থাকলেও নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অভীজ্ঞ শিক্ষক পাওয়া যায় না। কারণ ঢাকা, বুয়েট, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে শিক্ষকেরা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চান না। এর কারণ প্রতিষ্ঠিত এসব প্রতিষ্ঠান যেমন শিক্ষকেরা ছাড়তে চান না, তেমনি বড় শহরে থাকার বিভিন্ন সুযোগসুবিধাও হাতছাড়া করতে চান না তাঁরা।
এ অবস্থায় ইউজিসি বলছে, বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের ডেপুটেশনে পাঠানোর চিন্তাভাবনা চলছে। এটি করা গেলে সমস্যা কিছুটা কমবে।
ইউজিসির হিসাবে (২০১০) নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অধ্যাপক বা সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন না। একই অবস্থা ছিল পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটিতে।
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক আছেন মাত্র একজন। আর সহযোগী অধ্যাপক আছেন সাতজন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৬ জন শিক্ষকের মধ্যে অধ্যাপক মাত্র একজন। আর সহযোগী অধ্যাপক ছয়জন।
ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৪৭ জন শিক্ষকের মধ্যে অধ্যাপক মাত্র দুজন। আর সহযোগী অধ্যাপক ছয়জন।
টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক ১৬৮। এর মধ্যে অধ্যাপক মাত্র চারজন। আর সহযোগী অধ্যাপক ১০ জন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৪০ জন শিক্ষকের মধ্যে অধ্যাপক মাত্র একজন, সহযোগী অধ্যাপক চারজন।
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অধ্যাপক বা সহযোগী অধ্যাপক পদের অভিজ্ঞ শিক্ষক খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলো অনলাইনকে বলেন, গবেষণা ও শিক্ষকতা দুই ক্ষেত্রেই তাঁদের অভিজ্ঞতা থাকে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রবীণ শিক্ষকদের একটু অন্য রকম গ্রহণযোগ্যতা থাকে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবীণ ও তরুণ শিক্ষকের সমন্বয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা জরুরি। সবাই তরুণ হলে নির্দেশনার অভাব থাকে। আবার সবাই প্রবীণ হলে একধরনের স্থবিরতা চলে আসে। তিনি বলেন, ‘কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের সবকিছু ঢাকাকেন্দ্রিক। শিক্ষকতার বাইরে ঢাকার শিক্ষকেরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়া, পরামর্শক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। ঢাকার বাইরে সে সুযোগ নেই। এটি যেমন একটি দিক, অন্য একটি দিক হচ্ছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভালো গবেষণাগার নেই, গ্রন্থাগার নেই, গবেষণার সুযোগ নেই। এসব কারণে শিক্ষকেরা ঢাকার বাইরে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেতে আগ্রহী হন না।’ তিনি বলেন, পটুয়াখালী বা ত্রিশালে না গেলে বোঝা যাবে না সেখানে কী দুর্গতি।
মনজুরুল ইসলামের বক্তব্যের সঙ্গে অনেকটা একমত পোষণ করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী। তিনি বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় মূলত আবর্তিত হয় জ্ঞানের গভীরতা দিয়ে। এ জন্য অভিজ্ঞ, বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষকের বিকল্প নেই। অভিজ্ঞ শিক্ষক না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত রূপ ফুটে ওঠে না। কিন্তু সমস্যা হলো শিক্ষকেরা নানা কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী থেকে ছোট শহরের ছোট বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চান না। এ সমস্যা থেকে উত্তরণ কঠিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের স্বল্প সময়ের জন্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে পাঠানো যায় কি না, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। এ জন্য শিক্ষকদের ডেপুটেশন ভাতা, বাসা ভাড়াসহ বিভিন্ন প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা করারও চিন্তা চলছে, যাতে শিক্ষকেরা যেতে আগ্রহী হন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আমির হোসেন প্রথম আলো অনলাইনকে বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের অভিজ্ঞতা, জ্ঞানের পরিধি, দিক-নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয় চলবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা আসতে চান না। তাঁরা জ্যেষ্ঠ শিক্ষক পান না। কারণ তাঁরা সবাই ভালো জায়গায় স্থায়ী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন