রবিবার, ৯ অক্টোবর, ২০১১

তেজগাঁওয়ে অধিকাংশ সড়ক ভেঙে একাকার

তেজগাঁওয়ে অধিকাংশ সড়ক ভেঙে একাকার

আলাউদ্দিন আরিফ
কারওয়ানবাজার থেকে তেজগাঁও রেলক্রসিং হয়ে সাতরাস্তা যেতে চাইলে পারবেন না। কারণ, রাস্তাটির অবস্থা এতই ভয়াবহ যে গাড়ি বা রিকশা চলার উপায় নেই। হেঁটে যাবেন তারও উপায় নেই। সামান্য বৃষ্টি হলেই খানাখন্দে ভরা সড়কটি তলিয়ে যায় হাঁটু পানিতে। ফুটপাতসহ প্রশস্ত এ সড়কের অর্ধেকের বেশি দখল করে আছে ট্রাক। তার ওপর রয়েছে ছিনতাই আতঙ্ক। 


গতকাল তেজগাঁও ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সড়কই খানাখন্দে ভরা। রাস্তাগুলো প্রায় পাঁচ বছর ধরে সংস্কার নেই। কিছু রাস্তায় নতুন করে খোয়া-বালু দিয়ে ঢালাই দেয়া হয়েছে। তেজগাঁও ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কারওয়ানবাজার, তেজতুরিবাজার, পূর্ব ও পশ্চিম নাখালপাড়া, আরজতপাড়া, শাহীনবাগ, কুনিপাড়া, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, বেগুনবাড়িসহ সব এলাকার প্রধান সড়ক ও গলিপথগুলোর এখন বেহালদশা।
ফার্মগেট থেকে তেজগাঁও রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়কটি কিছুদিন আগে সংস্কার করা হয়েছে। তেজগাঁও বিজ্ঞান কলেজ থেকে দক্ষিণে কারওয়ানবাজারের সংযোগ সড়কটিতে দেখা গেছে বড় বড় গর্ত। এগুলোতে গাড়ি ও রিকশায় চলা দায় হয়ে পড়েছে। ১৭, পূর্ব তেজতুরিবাজারের গোল্ডেন প্লাজার গার্ড আশরাফ জানান, তাদের ভবনটির সামনে প্রায় তিন বছর ধরে রাস্তা খারাপ। সেখানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। ভবনের বাসিন্দারা নিজের টাকায় রাস্তার খোয়া ও সিমেন্ট ঢালাই করে গর্ত ভরাট করেছে। কিন্তু সিমেন্টের ঢালাই ও কার্পেটিং খাপ না খাওয়ায় সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ই সড়কের ১ ও ২ পূর্ব তেজতুরিবাজার প্যাসিফিক হোমসের সামনে বিশাল গর্ত। রিকশা চালানো দায়। ভবনের বাসিন্দা নজরুল জানান, প্রায় তিন বছর ধরে রাস্তাটি খারাপ হয়ে আছে। মেরামত হচ্ছে না। 


কারওয়ানবাজার থেকে সাতরাস্তার দিকে সড়কটির পুরোটাই যেন খাল। তেজগাঁও রেলক্রসিং সড়কের দু’পাশেই বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। খাদ্য গুদামের উত্তর ও দক্ষিণ পাশ দিয়ে যাওয়া সড়কের পুরোটাতেই ট্রাক, লরি, পিকআপ, কভার্ড-ভ্যান এবং মিনিবাসের অবৈধ পার্কিংয়ে এখন তা রীতিমত টার্মিনালে পরিণত হয়েছে। অথচ এ সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তেজগাঁও থেকে কারওয়ানবাজারে যাওয়ার সহজ সংযোগ সড়ক এটি। সড়কের বেহাল অবস্থা, এলোপাতাড়ি গাড়ি পার্কিং এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেকেই এ সড়ক দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও এ সড়কে যাতায়াতকারী ব্যক্তিরা জানান, এ সড়কের পাশে একটি স্বতন্ত্র ট্রাকস্ট্যান্ড থাকার পরও অসংখ্য ট্রাক এবং ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির পরিবহন রেখে রাস্তাটির প্রায় পুরো অংশ দখল করে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। এ সড়কের দু’পাশে অবস্থিত তিন-চারটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি পার্কিংয়েও কিছু অংশ দখল হয়ে আছে। অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে রাস্তার দু’পাশে ফুটপাতের চিহ্নও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এছাড়া সড়কটিতে রাখা বর্জ্য এবং পাশের প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র ফেলে রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। সড়কে যাতায়াতকারী একটি বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা টিপু সুলতান জানান, তিনি প্রায়ই এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন। সন্ধ্যার পর যে কেউ এ সড়কে নতুন এলে তাকে বিপদে পড়তে হয়। সাতরাস্তার মোড় থেকে ফুটপাত ধরে হাঁটা শুরু করে একটু পর আর ফুটপাতের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। পুরো রাস্তাটাই ট্রাকের দখলে থাকে। এ সড়কেই ভূমি জরিপ অধিদফতর, অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগ লিমিটেড, টেলিগ্রাফ ভবন, বাংলাদেশ টেলি কমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড, অ্যাপেক্স লিমিটেড, খাদ্য গুদামসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
তেজগাঁও রেলগেট থেকে তেজগাঁও রেলস্টেশন হয়ে উত্তর দিকের সড়কটিরও বেহালদশা বহু বছর ধরে। সড়কজুড়েই বড় বড় গর্ত। ফার্মগেট হলিক্রস স্কুলের পেছন থেকে নাখালপাড়া হয়ে নাবিস্কো যাওয়ার সংযোগ সড়কটিও বহুদিন থেকে খানাখন্দে ভরা। নাখালপাড়া এলাকার সড়ক, গলি, উপগলির বেহালদশা বহু বছর ধরেই। নাখালপাড়া কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে ওয়ার্ড কমিশনার অফিসের পাশ দিয়ে নাখালপাড়া বাজার পর্যন্ত সড়ক, শাহীনবাগ এলাকার বেশ কয়েকটি সড়ক খানাখন্দে ভরা।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের সড়কগুলোর বেহালদশার পাশাপাশি সবকটি সড়ক যেন আবর্জনার ভাগাড়। শিল্প এলাকার বর্জ্য ফেলে সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা করে রাখা হয়েছে। সাতরাস্তা থেকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের সামনে দিয়ে মিল্কভিটা হয়ে নিকেতন সড়ক, হামীম গার্মেন্ট সড়কসহ অনেক সড়ক দেখা গেছে খানাখন্দে ভরা। বেহাল ও খানাখন্দে ভরা রাস্তা দেখা গেছে বেগুনবাড়ি এলাকাতেও। ভাঙা ও খানাখন্দে ভরা সড়কের কারণে মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
তেজকুনিপাড়া এলাকায় বেশিরভাগই খোলা ড্রেন। বেশকিছু ম্যানহোল দেখা গেছে ঢাকনাবিহীন। এসব ড্রেনের পাশ দিয়ে প্রতিদিন বয়সীদের পাশাপাশি চলাফেরা করছে শিশুরা। অথচ শত অভিযোগের পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তেজকুনিপাড়ার বাসিন্দা সাদেকুর রহমান বলেন, বহু বছর ধরে তেজকুনিপাড়া এলাকার ড্রেনেজের বেহাল অবস্থা হলেও এসব সংস্কারের কোনো পদক্ষেপ নেই। তেজকুনিপাড়ার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম জানান, সন্ধ্যার পর প্রায়ই পথচারীদের মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা ছিনতাই হয়। সন্ধ্যার পর এসব গলির রাস্তায় হাঁটতেও ভয় করে। তেজকুনিপাড়ার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম সেলিম বলেন, অপরিকল্পিত বাড়ি তৈরির কারণে রাস্তাঘাট এতই সরু যে বিপদে অ্যাম্বুলেন্সও ঢুকতে পারে না। কিছু কিছু বাড়িতে কেউ মারা গেলে খাটিয়ায় করে লাশ পর্যন্ত নামানো দুরূহ হয়ে পড়ে। কেউ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারে না। আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার কোনো উপায় নেই।
৩৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহুল আমিন ভূঁইয়া এবং ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জানান, ভিআইপি এলাকা হওয়ার পরও এসব এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে রাস্তাগুলোর উন্নয়ন হচ্ছে না। সীমিত আকারে তারা যে বরাদ্দ পাচ্ছেন তাই দিয়েই কাজ করছেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন